মৌলভীবাজারে ঝড়বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ থাকে না

ঝড়বৃষ্টির মৌসুমের শুরুতেই মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎ বিপর্যয় শুরু হয়েছে। সামান্য ঝড়বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। কখনো কিছু সময় পর চলে আসে, কখনো অনেক সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুতের এই বিপর্যয় গত কদিনে প্রায় নিয়মে দাঁড়িয়েছে।

মৌলভীবাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে ৩০/৩৫ কিলোমিটার দূর থেকে। এর ফলে ঝোড়ো হাওয়া ও বজ্রবৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট হচ্ছে। এতে প্রায় ২৬ হাজার গ্রাহক দুর্ভোগে পড়েছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার সকাল থেকে মৌলভীবাজারে শুরু হয়েছে ঝড়বৃষ্টির প্রকোপ। হঠাৎ করেই আকাশ কালো করে মেঘ জমছে। শুরু হচ্ছে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়া। সঙ্গে সঙ্গেই চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। অনেক সময় বৃষ্টি নেই। শুধু দমকা হাওয়া দিলেও বিদ্যুৎ থাকছে না। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্য, বাসাবাড়িতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে মেঘ করে। অন্ধকার হয়ে আসে চারদিক। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চলে যায়। মেঘ করলেও বৃষ্টি ছিল না। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি। কয়েক দিন ধরেই বিদ্যুতের এই আসা-যাওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জেনারেটর চালিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে।

মৌলভীবাজার শহরের ফাস্ট ফুড ব্যবসায়ী অপূর্ব সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা হচ্ছে বিদ্যুৎনির্ভর। বিকল্প ব্যবস্থা থাকলেও বিদ্যুৎ ছাড়া সার্বক্ষণিক ব্যবসা চালানো কঠিন। পরশু দিন (রোববার) বিদ্যুৎ ছিল না। অনেক ক্ষতি হয়েছে। আজকে (গতকাল) প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ নেই। এর আগেও কয়েকবার আসা-যাওয়া করেছে। এখন বৃষ্টি হচ্ছে না। তারপরও বিদ্যুৎ নেই।’

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজার জেলা শহর ও শহরতলি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে থাকে জেলার শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত গ্রিড উপকেন্দ্র এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে। মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে সমস্যা হলে বিকল্প হিসেবে মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ লাইনের মাধ্যমে মৌলভীবাজার শহরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু ঝড়বৃষ্টিতে দুটি লাইনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ লাইনের দৈর্ঘ্য হচ্ছে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এবং মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ লাইনের দৈর্ঘ্য হচ্ছে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। এ দুটি লাইনই এসেছে পাহাড়, হাওর, চা-বাগান ও বাসাবাড়ির পাশ দিয়ে। ঝড়বৃষ্টি বা বাতাসে দুটি লাইনের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গাছপালা ভেঙে পড়ে। বজ্রপাতে ইনস্যুলেটর ফেটে যায়। তখন লাইনের কোথায় গাছপালা পড়েছে, কোথায় ইনস্যুলেটর ফেটেছে, তা খুঁজে ত্রুটি সারাতে অনেক সময় লাগে। গ্রাহকেরা এতে করে চরম দুর্ভোগের পড়েন। ঝড়-বাদলার মৌসুমে এই দুর্ভোগ প্রায় প্রতিবছরের। গতকালও মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল লাইনে বজ্রপাতে ইনস্যুলেটর ফেটে যায়। মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ লাইনে পিডিবির লাইনের ওপর পল্লী বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে পড়ে।

গ্রাহকেরা বলছেন, মৌলভীবাজার জেলা সদরে একটি বিদ্যুৎ গ্রিড উপকেন্দ্র থাকলে সমস্যার সৃষ্টি হতো না। ১৩২/৩৩ কেভি লাইন থেকে সরাসরি গ্রিড-উপকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে শ্রীমঙ্গল ও ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজন পড়ত না। সাধারণত গ্রিড-উপকেন্দ্র শহরের এক-দেড় কিলোমিটারের মধ্যে থাকে। এই অল্প দূরত্বের কোথাও সমস্যা হলে তা সমাধান করতে বেশি সময় লাগে না।

পিডিবির মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ঝড়বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। এখানে সাবস্টেশন থেকে দূরত্ব একটা বিষয়। মৌলভীবাজার থেকে দুটি সাবস্টেশনের দূরত্ব ৩০ থেকে ৩৫ কিলোমিটার। এত বড় লাইন। গাছপালা বেশি। ঝড় হলেই গাছ ভেঙে লাইনের ওপর পড়ে। তা ছাড়া এই অঞ্চলে বজ্রপাত বেশি হয়। বজ্রপাতে ইনস্যুলেটর ফেটে যায়। একটা গ্রিড সাবস্টেশন না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যা যাবে না।’