নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতের অভিযোগে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে।  ছবি: প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে। ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রশাসনের বিরুদ্ধে টাকা খেয়ে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা।

বিক্ষোভকারীরা চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এএসপি রেজাউল কবির ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুজ্জামানের অপসারণ দাবি করেন।

জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মাত্র ২৭ দিন হলো আমি এখানে যোগ দিয়েছি। আমি কাউকে ভালো করে চিনিও না। আর নির্বাচন কেমন হয়েছে সবাই দেখেছেন। ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি। দলীয় কিছু বিবেচনায় নিইনি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এখানে দলীয় প্রার্থী ছিলেন। এখানে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ফিরোজুর রহমান বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। গত রোববার অনুষ্ঠিত ভোটে তিনি ৬৮ হাজার ২৩৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। জাহাঙ্গীর ২৬ হাজার ৯০৭ ভোট পেয়েছেন।

নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই নৌকার প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য প্রশাসনকে দায়ী করে আসছে জেলা ছাত্রলীগ। পাশাপাশি ভোটের দিন সদর উপজেলার ১১৪টি কেন্দ্রে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ তোলা হয়। এর প্রতিবাদে গতকাল বেলা ১১টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। পরে হাসপাতাল সড়ক অবরোধ করে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা হাসপাতাল সড়কে তিনটি টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এ কারণে এ সড়কে বেলা একটা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ বাধা দেয়। পরে মিছিলটি জেলা শহরের ঘাটুরা এলাকার সমাজসেবা কার্যালয় এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।

বিক্ষোভ চলাকালে বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সুজন দত্ত, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী খায়রুল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের মাহমুদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, প্রশাসনের অত্যুৎসাহী লোকজন টাকার কাছে বিক্রি হয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। পুলিশ প্রশাসন টাকার নেশায় বুঁদ হয়ে বাহিনীকে ছাত্রলীগের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছে। বিনা উসকানিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর উদ্দেশ্যমূলকভাবে হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন এএসপি রেজাউল কবির ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুজ্জামান।

জানতে চাইলে এএসপি (সদর সার্কেল) রেজাউল কবির বলেন, ‘আমরা কারও বিরুদ্ধে কাজ করিনি। কারও পক্ষেও ছিলাম না। পুলিশের সঙ্গে কোথাও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ঝামেলা হয়নি।’

ছাত্রলীগের নেতারা আরও বলেন, নির্বাচনের আগের রাতে বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান রহস্যজনক কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন। তিনি রাতেই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ফিরোজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী লোকমান হোসেন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শামীমা আক্তারের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেন। বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে যোগসাজশ করে নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকা রাখার অভিযোগ তুলে দুই সাংবাদিকের শাস্তিও দাবি করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

বক্তৃতাকালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন ওই তিন কর্মকর্তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি জানান।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক ঘণ্টা থেকেছি। তারপর কুমিল্লা ও ফেনী চলে যাই। আমার অধীনে সব জেলা ঘোরার চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতো নির্বাচন সুষ্ঠু করার চেষ্টা করেছি।’