চকরিয়ায় বিদ্যালয়ের পাশে তামাকখেত

কক্সবাজারের চকরিয়ার দক্ষিণ বরইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই এভাবে তামাকখেত করা হয়েছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায়।  প্রথম আলো
কক্সবাজারের চকরিয়ার দক্ষিণ বরইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই এভাবে তামাকখেত করা হয়েছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায়। প্রথম আলো

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ বরইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন পাশে তামাকখেত ও ১০০ ফুট দূরে একটি তামাকচুল্লি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে। এ ছাড়া তামাক চাষ ও তামাক পোড়ানোর কারণে আশপাশের লোকজন আছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বানিয়ারছড়া থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে বিদ্যালয়টির অবস্থান। ৪১৯ জন ছাত্রছাত্রী এই বিদ্যালয়ে পড়ছে। শিক্ষক রয়েছেন ৯ জন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, তাঁর বিদ্যালয়ের তিন পাশে তামাকখেত। ১০০ ফুট দূরে নির্মাণ করা হয়েছে তামাকচুল্লি। চুল্লি থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়ার কারণে পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে। এই বিষাক্ত গ্যাস ও ধোঁয়া থেকে বাঁচতে বিদ্যালয়ের এক পাশের জানালা সব সময় বন্ধ রাখতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ছালেহ আহমদ, নুরুল কবির ও আবুল বশর বলেন, সাত থেকে আট বছর ধরে বিদ্যালয়ের পাশে তামাকখেত করা হচ্ছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চুল্লিতে তামাক পোড়ানো হয়। এতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে। তামাকচাষিদের অনেকভাবে বোঝানোর পরও তাঁরা তামাক চাষ থেকে বিরত থাকছেন না। তামাকচুল্লিটি নির্মাণ করা হয়েছে তিন বছর আগে। এই তামাকচুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে।

দক্ষিণ বরইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী তামান্না নুসরাত, আব্দুল করিম, সাইদুল আমিন বলে, তামাকের চুলায় যখন আগুন দেওয়া হয়, তখন চুলা থেকে ঝাঁজালো ধোঁয়া বের হয়। এ সময় চোখ জ্বালা করে ও মাথা ঘোরে।

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বানিয়ারছড়া থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে দক্ষিণ বরইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে ঢোকার সড়কটির দুই পাশে তামাকখেত ও সড়কটির পশ্চিম পাশে তামাকচুল্লি। চুল্লির ধোঁয়া বাতাসে বিদ্যালয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এতে কালো ধোঁয়ার উৎকট গন্ধ ভেসে আসছে।

দক্ষিণ বরইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিন বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে ইউএনওসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের বলেছি। তাঁরা আশ্বাসও দিয়েছেন, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।’ বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ বলেন, বিদ্যালয়ের তিন পাশে তামাকখেত অনেক আগে থেকে আছে। তবে বিদ্যালয়ের ১০০ ফুটের মধ্যে তামাকচুল্লি করাটা গর্হিত কাজ। চুল্লিটি শিক্ষার্থীদের চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলেছে। বিষয়টি আমি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় তুলে ধরব।’

চকরিয়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (বরইতলীর দায়িত্বপ্রাপ্ত) বিকাশ ধর বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে তামাকখেত ও তামাকচুল্লির কারণে শিশুরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে। সচেতনতার অভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে তামাকখেত করা হয়েছে। তাঁদের অনেকভাবে বিষয়টি বলা হয়েছে।

ইউএনও নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘তামাকচুল্লি থেকে গ্যাস নির্গত হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে—এমন অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। আমি বন আইনে ব্যবস্থা নেব।’