প্রভাবশালীদের মদদে ফুটপাত দখল

ফুটপাত দখল করে চলছে ব্যবসা। গতকাল কাফরুলে।  ছবি: প্রথম আলো
ফুটপাত দখল করে চলছে ব্যবসা। গতকাল কাফরুলে। ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া দুই শিশুর মা বলেন, ‘স্কুল খুব দূরে নয়। কিন্তু ফুটপাত না থাকায় ওদের একা ছাড়তে পারি না। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরিজীবী হওয়ায় সন্তানদের স্কুলে আনা–নেওয়া করতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। স্থানীয় আরেক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি বলেন, রাস্তার এক পাশেই ফুটপাত। তা–ও দখল। অথচ রোজ এই রাস্তায় পুলিশ টহল দেয়। টাকা দিয়ে ঢাকায় সব অনিয়ম এখন জায়েজ হয়ে যাচ্ছে।

ফুটপাতের উল্টো দিকে মজনু ফকির ও সোনাই ফকিরের ভাঙারি দোকান। তাঁরা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। এর মধ্যে মজনু ফকির আবার ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর ইউনিট স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি। তাঁরা স্থানীয় কাউন্সিলরের আত্মীয়। এই দোকানে পুরোনো টিন, লোহা, কাগজ থেকে শুরু করে বই, খাতা, প্লাস্টিকের বোতলও বিক্রি হয়। দোকান দুটি ভাঙারি পণ্যে বোঝাই হয়ে আছে। বাড়তি পণ্য দিনভর ফুটপাতে রাখা হয়। রাতে পিকআপ ভ্যানে করে মালামাল বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। কেরানীগঞ্জ, ইসলামবাগ, ধোলাইখাল, নিমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় এই ভাঙারি পণ্য বিক্রি করা হয়।

দোকানিরা জানান, প্রতি সপ্তাহে ভাঙারির দোকান থেকে ১৫০-২০০ টাকা পুলিশের খরচ বাবদ লাইনম্যানকে দিতে হয়। ফুটপাত দখল প্রসঙ্গে মজনু ফকির বলেন, ‘ফুটপাতের অন্য অংশ চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন কারণে দখল। সেসব অংশ খালি করা হলে আমিও খালি করে দেব।’ আর কাউন্সিলরের আত্মীয় পরিচয় কাজে লাগিয়ে বা দলীয় কোনো প্রভাবের কারণে দখলের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি।

নাম না প্রকাশের শর্তে ফুটপাতের এক চা দোকানদার বলেন, ‘গরিব মানুষ। চা-বিস্কুট বেচে খাই। শহরে টাকাপয়সা খরচ না করে কি ব্যবসা চালানো যায়?’ কাকে টাকা দিতে হয় নির্দিষ্ট করে জানতে চাইলে তিনি বলতে রাজি হননি। তবে দোকান চালাতে তাঁকে রোজ ৩০ টাকা খরচ করতে হয় বলে জানান।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ফোরকান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সী বলেন, ‘দখলকৃত ফুটপাতটি আমারও নজরে এসেছে। এলাকার মুসল্লিরা আপত্তি জানিয়েছেন। ফুটপাতটি দখলমুক্ত করতে আমি আমার অফিসারদের বলেছিলাম। তাঁরা ব্যবস্থা না নিলে আমি দেখছি।’ তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরের সব ফুটপাতেই দোকানপাট রয়েছে। তবে এর সঙ্গে টাকাপয়সার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।