উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির সময়সীমা শেষ হচ্ছে

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আজ বুধবার নবম দিনের মতো আন্দোলন আব্যাহত রেখেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক সেখানে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান। তবে শিক্ষার্থীরা এতে সাড়া দেননি।

এদিকে গত সোমবার উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার বেলা দুইটায় সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। তবে উপাচার্য পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।

আন্দোলনত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি লোকমান হাকিম দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কয়েকজন শিক্ষক আজ সকালে সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এখন তো আর সমঝোতার কোনো পথ নেই। কারণ, উপাচার্য শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য অকারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছেন। শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি তিনটি হলের ডাইনিং বন্ধ করে দিয়ে অমানবিক আচরণ করেছেন। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একজন উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন নির্দয় আচরণ করতে পারেন না।

শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্যের পদত্যাগের ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা পার হচ্ছে আজ। এরপর বুধবার বিকেল ৪টায় শিক্ষার্থীরা নিজেদের রক্ত দিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে স্বাক্ষর করবেন। পরে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

তবে উপাচার্য অধ্যাপক এস এম ইমামুল হক পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার শিক্ষকেরা আজ গিয়েছিল সমঝোতার জন্য। যেহেতু তারা আলোচনায় রাজি নয়, সে ক্ষেত্রে আমার কিছু করার নেই। তারা যেটা করার করবে।’

এর আগে উপাচার্য অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। তারপরেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো কারণ দেখছি না। তাদের দিয়ে একটি গোষ্ঠী বা একটি চক্র আন্দোলন করাচ্ছে। তাদের আন্দোলনে অর্থের জোগান দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করিয়ে ওই গোষ্ঠী ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।’

শিক্ষার্থীরা বলেন, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নগরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে চা-চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এতে শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ও পাঁচ দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই দিন দুপুরে এক অনুষ্ঠানে উপাচার্য এস এম ইমামুল হক আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেন। এরপর গত বুধবার থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন।

শিক্ষার্থীদের অব্যাহত বিক্ষোভের মুখে গত বুধবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশের কথা জানানো হয়। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর অবশ্য নিজের মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন উপাচার্য।