এস এম হলের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

মারধরের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরিদ হাসান। ছবি: সংগৃহীত
মারধরের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফরিদ হাসান। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে (এস এম হল) শিক্ষার্থী ফরিদ হাসানকে মারধর ও ডাকসুর ভিপি নুরুল হকসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ বুধবার হল প্রশাসন চার সদস্যের এই কমিটি গঠন করে।

এস এম হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদকে প্রধান করে গঠিত এ তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হলের আবাসিক শিক্ষক আবু বিন হাসান সুসান, জাহিদ উল আরেফিন চৌধুরী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আবু হোসেন মুহম্মদ আহসান।

কমিটির প্রধান সাব্বীর আহমেদ তদন্ত কমিটির বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এস এম হলের ঘটনা তদন্তে আমাকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তবে কোনো নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি।’

প্রসঙ্গত, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ার সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ফরিদ হাসানকে এস এম হল শাখা ছাত্রলীগ ও হল সংসদ নেতাদের নেতৃত্বে গত সোমবার রাতে মারধর করার হয়। হল সংসদের নেতারা ফরিদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও সেবনের অভিযোগ তোলেন।

ফরিদকে মারধরের ঘটনার বিচার চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে হলের প্রাধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন ভিপি নুরুল হকসহ ডাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন সংগঠন ও জোট থেকে বিভিন্ন পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা। তাঁরা হলটির ভেতরে গেলে সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। এরপর সন্ধ্যায় ওই হল থেকে বের হতে গেলে নুরুল হক ও ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, শামসুন নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনীম আফরোজ, ছাত্র ফেডারেশন থেকে ডাকসুর জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উম্মে হাবিবা, স্বতন্ত্র জোট থেকে ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অরণি সেমন্তি খানসহ বেশ কয়েকজনকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁদের লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করেন তাঁরা৷ নিক্ষিপ্ত ডিম হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দারের গায়েও লাগে।

এই ঘটনার বিচার চেয়ে গতকাল রাত পৌনে আটটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীরাও। আন্দোলনকারীদের পাশেই অবস্থান নেন এস এম হল সংসদ ও হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা নুরুলসহ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পাল্টা স্লোগান দেন। আজ সকাল নয়টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের পর আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর কার্যালয়ে যান। উপাচার্য তাঁদের নাশতা করান ও বিচারের আশ্বাস দেন ৷ পরে রাজু ভাস্কর্যে সংবাদ সম্মেলন করে সোমবারের মধ্যে বিচার না পেলে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে সোমবার পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন নুরুল হক।

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ থেকে এসএম হল সংসদের জিএস পদে জয়ী জুলিয়াস সিজার প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেছেন, নুরুল হক এসএম হলে ছাত্রী ও বহিরাগতদের নিয়ে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ৷ এ ছাড়া নুরুল এস এম হলে ঢোকার আগে হল সংসদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলেননি। একজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি এটি করতে পারেন না বলে অভিযোগ করেন সিজার।