জাবিতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি মারামারি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মারামারির ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় এক শিক্ষার্থীকে মারধরের জেরে আজ বুধবার দুপুরে নতুন কলা ভবনের সামনে আবার মারধরের ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় সূত্র জানায়, গত সোমবার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যান দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) শেখ শাহরিয়ার পারভেজ। এ সময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এস এইচ পিয়াস তাঁকে ডেকে পরিচয় জানতে চান। শাহরিয়ার পারভেজ পরিচয় দিতে না চাইলে তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে সেখান থেকে শাহরিয়ার পারভেজ চলে যান।

শাহরিয়ার পারভেজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং এস এইচ পিয়াস মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র। তাঁরা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

প্রক্টর কার্যালয় সূত্র জানায়, সোমবারের ঘটনার পর গতকাল বিকেলে বটতলায় খেতে যান পিয়াস। খাওয়া শেষ করে হলে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন শাহরিয়ার পারভেজসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাত থেকে আটজন ছাত্র। এ সময় বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাকলাইন সাকিব বাধা দিলে তাঁকেও মারধর করা হয়। সাকলাইন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক ছাত্র।

প্রক্টর কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকালের জেরে আজ বেলা সোয়া একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে শাহরিয়ার পারভেজকে পাল্টা মারধরের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, আজ দুপুরে ক্লাস শেষ করে নতুন কলা ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহরিয়ার পারভেজ। এ সময় এস এইচ পিয়াস ও সাকলাইন সাকিবের নেতৃত্বে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী তাঁর ওপর হামলা করেন। এ সময় শাহরিয়ার পারভেজকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে দর্শন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক তাঁকে উদ্ধার করেন। আহত অবস্থায় শাহরিয়ার পারভেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

জানতে চাইলে এস এইচ পিয়াস ও সাকলাইন সাকিবকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন শাহরিয়ার পারভেজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে যাই। সেখানে বন্ধুকে না পেয়ে আমি ফিরে আসছিলাম। এ সময় পিয়াস নিজেকে ৪৭তম ব্যাচের (২০১৭-১৮ শিক্ষার্ষ) শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে আমার পরিচয় জিজ্ঞেস করে। আমি পরিচয় দিতে রাজি না হলে তিনি আমার শার্টের কলার ধরেন। তবুও আমি পরিচয় না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসি। পরিচয় না দেওয়ার কারণে তাঁরা আজ আমাকে মারধর করেছে।’

এস এইচ পিয়াস বলেন, ‘সোমবার শাহরিয়ার পারভেজের সঙ্গে বন্ধু হিসেবে মজা করেছিলাম। কিন্তু সে সাত–আটজনকে নিয়ে মঙ্গলবার আমাকে মারধর করে। বিষয়টি হলের বন্ধু ও বড় ভাইদের জানালে তাঁরা মারের বদলে মার দেওয়ার কথা বলেন। পরে শাহরিয়ার পারভেজকে মারধর করা হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের (৪৮তম ব্যাচ) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার দেড় মাসও হয়নি। এর মধ্যে দল বেঁধে মারামারি করার বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতি ও হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’