নির্মাণকাজে অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে তদন্তে

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ঘনিয়ারপাড় এলাকায় খাদ্যগুদামের নির্মাণাধীন ভবনে নিম্নমানের ইট, পাথর ও সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জেলা কার্যালয়ের গবেষণাগারে পরীক্ষা করে এর প্রমাণ মিলেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, ওই খাদ্যগুদামের নির্মাণকাজে নিচু মানের সামগ্রী ব্যবহারের যে অভিযোগ উঠেছে তার সত্যতা গবেষণাগারের পরীক্ষায় পাওয়া গেছে। চাঁদপুর এলজিইডির গবেষণাগারের পাঠানো এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন গতকাল বুধবার তাঁর কার্যালয়ে এসেছে। ভবন নির্মাণের অনিয়ম নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে শিগগিরই চিঠি পাঠাবেন তিনি।

ওই খাদ্যগুদামের নতুন ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহৃত হচ্ছে বলে গত সোমবার ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেন স্থানীয় লোকজন। এর ভিত্তিতে ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ করেন ইউএনও শারমিন আক্তার। পরে সেখানে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত এবং ব্যবহারের জন্য আনা মালামালের মান পরীক্ষা করার জন্য চাঁদপুরে এলজিইডির গবেষণাগারে পাঠানো হয়।

এ নিয়ে মঙ্গলবার ‘নির্মাণকাজ বন্ধ করলেন ইউএনও’ শিরোনামে প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

মতলব উত্তর উপজেলা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ওই খাদ্যগুদাম নির্মাণে যেসব ইট, সিমেন্ট, বালু ও পাথর ব্যবহার করা হয়েছে এবং ব্যবহারের জন্য যেগুলো মজুত রাখা হয়েছে, সেগুলো নিম্নমানের। গবেষণাগারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইমারত নির্মাণের শর্ত ও নিয়ম অনুসারে, পাথরের স্বাভাবিক মান ৩০ এলএএ (লস্ট অ্যাঙ্গেলস অ্যাব্রাসন) হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারের ব্যবহৃত পাথরের মান ৫৭ দশমিক ৮০। ১ দশমিক ৯ মানের সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহৃত হয়েছে দশমিক ৯০ মানের। ২ হাজার ৫০০ পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ার ইঞ্চি) মানের ইট ব্যবহার করার কথা থাকলেও ঠিকাদার ব্যবহার করেছেন ১ হাজার ২০৪ মানের।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ঘনিয়ারপাড় এলাকায় ৫০০ মেট্রিক টন খাদ্যের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গুদামের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকার বরাদ্দ দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকার গুলশান-২ এলাকার স্থপতি সংসদ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে এর নির্মাণকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি মেসার্স গোলাম মোস্তফা ট্রেডার্স নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি দেয়। এ প্রতিষ্ঠানের মালিক কাউসার আহম্মেদ ভবনটি নির্মাণের দায়িত্ব নেন। পরে তাঁর কাছ থেকে চাঁদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুর এন্টারপ্রাইজের মালিক কামরুল হাসান উপঠিকাদার হিসেবে কাজটি নেন। কার্যাদেশ অনুযায়ী, গত বছরের ৩০ জানুয়ারি কাজ শেষ করার কথা।

সূত্রটি আরও জানায়, ঠিকাদার কামরুল হাসান ২০১৭ সালে কাজ শুরুর কিছুদিন পর নানা অজুহাতে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। এর পাশের একটি স্থানে ইট, সিমেন্ট ও পাথর রেখে চলে যান। প্রায় এক বছর কাজ বন্ধ থাকার পর ১০-১২ দিন আগে তিনি আবার কাজ শুরু করেন। জমে যাওয়া সিমেন্ট, নষ্ট ইট ও পাথরসহ অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করে তাঁর চাচাতো ভাই মো. ইদ্রিস মিয়ার মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে সোমবার বিকেলে এলাকার লোকজন সেখানে জড়ো হন। তাঁরা ইদ্রিস মিয়াসহ অন্য শ্রমিকদের আটক করে ইউএনওকে খবর দেন। ইউএনও কাজ বন্ধ করে আটক ব্যক্তিদের উপজেলা পরিষদে নিয়ে যান।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদার কামরুল হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, মালামাল আনতে সমস্যা হওয়ায় এবং অন্যান্য কারণে প্রায় এক বছর ধরে ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়। নিম্নমানের সামগ্রী আর ব্যবহার করা হবে না। নতুন করে মালামাল আনবেন।