খাবারের প্রশংসা নিয়ে আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ১

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়।
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়।

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের পোয়াইল গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম দেলোয়ার মাতুব্বর (৩৮)। তিনি চাতুল ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল মাতুব্বরের চাচাতো ভাই। গতকাল বুধবার রাতের এ ঘটনায় আটজন আহত হয়েছেন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর বাড়ির খাবারের প্রশংসা করা নিয়ে এই সংঘর্ষের শুরু হয় বলে জানান স্থানীয় লোকজন। এর জের ধরে গ্রামটির ২০ থেকে ২২টি বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

এলাকাবাসী, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পোয়াইল গ্রামে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ রয়েছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জামাল মাতুব্বর এবং অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও চতুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন। গত ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পর্যায়ের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নাজিম উদ্দিন ছিলেন আওয়ামী লীগ–মনোনীত প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এম মোশাররফ হোসেনের (নৌকা) পক্ষে। অন্যদিকে, জামাল মাতুব্বর ছিলেন বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নেতা মো. লিটন মৃধার (আনারস) সমর্থক। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ–মনোনীত প্রার্থী মোশাররফ হোসেন।

গতকাল রাত নয়টার দিকে নাজিম উদ্দিন গ্রুপের সমর্থক আক্কেল মোল্লা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর বাড়ি থেকে রাতের খাবার খেয়ে এলাকায় যান। খাবারের প্রশংসা করা নিয়ে প্রতিপক্ষের সমর্থক দেলোয়ার মাতুব্বরের কথা-কাটাকাটি হয় তাঁর। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে দুই পক্ষই লাঠি, রড, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে দেলোয়ার মাতুব্বর গুরুতর আহত হন। তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ফরিদপুর সদরের কানাইপুর এলাকায় মারা যান।

গতকাল রাত সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১২টার পর্যন্ত এই সংঘর্ষ চলাকালে ২০ থেকে ২২টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া গ্রামটির বেশ কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। এই সংঘর্ষে দুই পক্ষের আটজন সমর্থক আহত হন। তাঁদের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করানো হয়।

ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল মাতুব্বর বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রতীকে মো. লিটন মৃধার পক্ষে ছিলাম। এ কারণে দলের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। এর জের ধরে আমার প্রতিপক্ষ গ্রুপের নাজিম উদ্দিন, আক্কেলসহ তাদের লোকজন আমার চাচাতো ভাইকে হত্যা করেছে।’

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ইউপি সদস্য নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার সমর্থক আক্কেল মোল্লাকে অপমান ও মার দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শামীম হাসান বলেন, দেলোয়ারের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন।