ডা. লায়লাকে ভিসি নিয়োগের নির্দেশ হাইকোর্টের

অধ্যাপক ডা. লায়লা পারভিন বানু। ছবি: সংগৃহীত
অধ্যাপক ডা. লায়লা পারভিন বানু। ছবি: সংগৃহীত

গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে অধ্যাপক লায়লা পারভীন বানুকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী নিয়োগে সহায়তাদানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ কথা বলা হয়। ৩ এপ্রিল এটি প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর উপাচার্য পদে লায়লা পারভীন বানুর বৈধতা সংক্রান্ত রিট মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন আদালত।

গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ডা. লায়লা বানু চলতি দায়িত্ব গ্রহণের পরে ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এক চিঠিতে তাঁকে ওই পদে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। গণবিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউজিসির ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে। এবং পরে ডা. লায়লা বানু রিটে পক্ষভুক্ত হন।

এগারো পৃষ্ঠার রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর গণ বিশ্ববিদ্যালয় নতুন উপাচার্য নিয়োগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। এরপর দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ট্রাস্টি বোর্ড ডা. লায়লাসহ তিনজনের একটি প্যানেল থেকে উপাচার্য নিয়োগে রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু ইউজিসি এক চিঠিতে গণ বিশ্ববিদ্যালয়কে জানায় যে, উপাচার্য হিসেবে ডা. লায়লার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নেই। এর আগে ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই উপাচার্য নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়। ট্রাস্টি বোর্ড ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ ডা. লায়লাকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিয়োগ করে।

এরপর রায়ে বলা হয়, ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট জারি করা রুলের বিরোধিতা করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান উল্লেখ করেন যে, আইনের শর্ত অনুযায়ী স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছরের শিক্ষকতা করার অভিজ্ঞতা তাঁর নেই। কিন্তু উপাচার্য হতে তাঁর অন্যান্য যোগ্যতার ঘাটতি আছে বলে রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করেনি। গণ বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বীকৃত ও অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়। এবং তা কখনো বাতিল করা হয়নি।

এ ছাড়া ১৯৯৫ সালে ইউজিসি গণবিশ্ববিদ্যালয়কে তার মেডিকেল অনুষদ চালাতে অনুমোদন দেয় এবং নথিপত্র পর্যালোচনায় পরিষ্কার যে, তাও কখনো বাতিল করা হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে তেমন কোনো দাবিও করা হয়নি। তাই ২০০৩ সালের পরিপত্র অনুযায়ী ডা. লায়লা যদি কোনো শর্ত পূরণ নাও করেন, তাহলে তার দায় তাঁকে দেওয়া চলে না। সে কারণে ২০০৩ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত গণবিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদে তাঁর শিক্ষকতার মেয়াদকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। সে কারণে তাঁকে অযোগ্য বিবেচনা করে দেওয়া ইউজিসির চিঠির আইনগত ভিত্তি নেই। তিনি ২০০৯ সাল থেকে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, বিধি অনুযায়ী ডা. লায়লাকে যোগ্যতা সম্পন্ন মনে না করার কারণে তারা উল্লিখিত উপাচার্য প্যানেলটি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দপ্তরে তাঁর বিবেচনার জন্য প্রেরণ করেননি। কারণ রাষ্ট্রপতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে একটি অলিখিত রেওয়াজ অনুসরণ করে আসছেন। আর সেটি হলো তিনজনের প্যানেলে যাঁর নাম এক নম্বর ক্রমিকে থাকে তাঁকেই রাষ্ট্রপতি উপাচার্য নিয়োগ দেন। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড ডা. লায়লার নামটিই শীর্ষে রেখেছেন।

ডা. লায়লা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর পুলিশ কর্মকর্তা বাবাকে ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করে। তৎকালীন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী লায়লা পারভীন বানু সরাসরি নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গোবরা ক্যাম্পে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর যুদ্ধকালীন সহকারী হিসেবে কাজ করেন।