বর্ষবরণের সময় না বাড়লে অনুষ্ঠান বর্জন

চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। টিয়া পাখি, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, মাছ, ময়ূর, ঘুড়িসহ বিভিন্ন মুখোশ তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা। গতকাল বিকেলে যশোরের চারুতীর্থ ক্রিয়েটিভ আর্ট স্কুলে।  প্রথম আলো
চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। টিয়া পাখি, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, মাছ, ময়ূর, ঘুড়িসহ বিভিন্ন মুখোশ তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা। গতকাল বিকেলে যশোরের চারুতীর্থ ক্রিয়েটিভ আর্ট স্কুলে। প্রথম আলো

বর্ষবরণের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শেষ করার জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে যশোরের ২০টি সাংস্কৃতিক সংগঠন।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উদীচী যশোর কার্যালয়ে জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেন সংগঠনগুলোর নেতারা। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ডি এম সাহিদুজ্জামান। সভা থেকে আগামীকাল রোববার সকালে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং বিকেলে শহরের চিত্রার মোড়ে মানববন্ধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায়সুরধ্বনি সংগীত একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান, পুনশ্চ যশোরের প্রতিষ্ঠাতা সুকুমার দাস, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ও বিবর্তন যশোরের সভাপতি সানোয়ার আলম খান, চাঁদের হাট যশোরের প্রতিষ্ঠাতা ফারাজী আহমেদ, সুরবিতানের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বিশ্বাস, নৃত্যবিতানের পরিচালক সঞ্জীব চক্রবর্তী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শেষ করার বিষয়টি মানতে পারছে না যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। সাংস্কৃতিক সংগঠকেরা বলছেন, নতুন বছর বরণ করতে বিভিন্ন সংগঠন প্রায় তিন যুগ ধরে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে শহরের ২০টির মতো স্থানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে। এসব অনুষ্ঠানে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব ধরনের মানুষ অংশ নেয়। যে কারণে যশোরের নববর্ষের অনুষ্ঠান সর্বজনীন রূপ নিয়েছে।

তাঁরা বলছেন, চার বছর ধরে নাশকতা ও জঙ্গি হামলার শঙ্কা প্রকাশ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় বেঁধে দিচ্ছে সরকার। এতে করে সংগঠনগুলো পরিতৃপ্তির সঙ্গে অনুষ্ঠান করতে পারছে না। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের যে লক্ষ্য নিয়ে এই সাংস্কৃতিক উৎসব হতো, তা তথাকথিত মৌলবাদীদের ভয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা এই ভয়ের বৃত্ত থেকে বাইরে আসতে চান।

জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ডি এম সাহিদুজ্জামান বলেন, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সময় বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে আগামীকাল রোববার সকালে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এ ছাড়া ওই দিন বিকেলে শহরের চিত্রার মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার প্রত্যাশা, পয়লা বৈশাখের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কোনো বিধিনিষেধের বেড়াজালে আবদ্ধ না করা হোক। ঝুঁকি থাকলে তা নিরসনে নিরাপত্তা জোরদারে প্রশাসনকে ভূমিকা নিতে হবে।’

জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, রাজধানীর বাইরে যশোরেই সবচেয়ে সাড়ম্বরে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়। বিখ্যাত মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরুও যশোর থেকেই। এবারের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আড়ম্বরপূর্ণ করতে প্রায় দুই মাস ধরে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকার যদি তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে যশোরে বর্ষবরণের সব অনুষ্ঠান বর্জন করা হবে।