'হাতখরচ' না পেয়ে ঠিকাদারের লোককে মারধর

আরও ‘হাতখরচার’ টাকা না পাওয়ায় খুলনায় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের ছেলে পিটিয়ে আহত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ঘটনায় দাকোপ থানায় দায়ের হওয়া মামলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মামলায় দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২ নম্বর দাকোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ রায়ের ছেলে সঞ্জীব রায়কে প্রধান আসামি করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাহেবের আবাদ গ্রামের শুভংকর রায়, জয়ন্ত, সুকুমার রায়, মধ্য দাকোপের দেবদাশ মণ্ডল, দাকোপ বাজারের নিতাই মণ্ডল, খগেন রায় ও সিংজোড়া গ্রামের দুর্গাপদ রায়।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বাঁধ ও অভ্যন্তরীণ নিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নে উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) কাজ চলছে। এর আওতায় খুলনার দাকোপের ৩৩ নম্বর পোল্ডারে রাস্তা ও বিভিন্ন খাল খননের কাজ চলছে। চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো অব হেনান ওয়াটার কনজারভেন্সি’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পের কাজগুলো করছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ‘চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ রায়ের ছেলে সঞ্জীব রায় বিভিন্ন সময় হাতখরচার টাকা দাবি করে চাঁদাবাজি করে। সে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কাজ না করলেও কাজে যাতে বিঘ্ন না ঘটাতে পারে, সে জন্য তাকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। তারপরও নানা উপায়ে টাকা দাবি করে, কাজে বাধা দেয়। তার পছন্দমতো লোককে কাজে নিতে হয়। কাজের জন্য আনা বিভিন্ন লোহার সামগ্রী, পাথর, বালু, সিমেন্ট চুরি করে সে বিক্রি করে দেয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার ৩৩ নম্বর পোল্ডারের চুনকুড়ি ডাঙ্গাপাড়া থেকে পোদ্দারগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তার কাজ করার জন্য পোদ্দারগঞ্জ খাল থেকে মাটি সংগ্রহের সময় সঞ্জীব ও তাঁর সহযোগীরা বাধা দেন। চায়না শ্রমিকেরা বাধা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এক্সকাভেটরচালক রামিল মোল্যাকে সঞ্জীব লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন। অন্যরা শ্রমিকদেরকে মারধর করে।

দাকোপ থানার ওসি মোকাররম হোসেন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে মারার ঘটনায় আটজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নিতাই ও খগেন নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ রায় গতকাল বিকেলে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিকভাবে কাজ করছে না। খাল খননের নামে অনেক গাছ কেটে ফেলছে; নষ্ট করছে। আমার ছেলে গিয়ে সেসব গাছ কাটতে নিষেধ করে। না শোনায় কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে দু-চারটে চড়থাপ্পড় ও দুইটা বাড়ি দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্মাণকাজের তদারক করা, মাটির সমস্যাসহ স্থানীয় নানা সমস্যা মেটানোর অনারিয়াম (সম্মানী) বাবদ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমার ছেলেকে ২০ হাজার করে টাকা দেয়। আর প্রকল্পের কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় প্রকল্পের মালামাল চুরি করে। আমার ছেলে বিভিন্ন সময় সেগুলো উদ্ধার করেছে। এ জন্য শত্রুতা।’