বৈসাবি ঘিরে কোমর তাঁতে ব্যস্ততা

বৈসাবি উৎসবে ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনাই ও রিসা পরেন ত্রিপুরা নারীরা। উৎসবের জন্য নতুন রিনাই বুনতে ব্যস্ত এক নারী। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খাগড়াছড়ির খাগড়াপুরে।  প্রথম আলো
বৈসাবি উৎসবে ঐতিহ্যবাহী পোশাক রিনাই ও রিসা পরেন ত্রিপুরা নারীরা। উৎসবের জন্য নতুন রিনাই বুনতে ব্যস্ত এক নারী। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খাগড়াছড়ির খাগড়াপুরে। প্রথম আলো

পাহাড়ের অন্যতম সামাজিক উৎসব বৈসাবি আবার দোরগোড়ায়। এই উৎসবে পাহাড়ি নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক বোনা হয় কোমর তাঁতে। এই পোশাক পাহাড়ের সব জনগোষ্ঠীর নারীরা পরেন। চাকমাদের কাছে এটি পিনন-হাদি আর ত্রিপুরাদের কাছে রিনাই-রিসা নামে পরিচিত। সারা বছর অন্য ধরনের পোশাক পরলেও বৈসাবি উপলক্ষে পাহাড়ি নারীদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে এই পোশাক।

একসময় হাতেগোনা কয়েকটি রঙের সুতা দিয়ে পিনন-হাদি তৈরি হতো। তবে বর্তমানে বিভিন্ন রঙের সুতা ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেকে নিজেদের মনের মতো নকশা করছেন।

কদিন বাদেই বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, বিহু (বৈসাবি) উৎসব। পাহাড়ের প্রধান এই উৎসবকে ঘিরে শেষ মুহূর্তে তাঁতশিল্পীদের ব্যস্ততা বেড়েছে। কোমর তাঁতে দিন-রাত কাজ করে উৎসবের আগেই পোশাকটি প্রিয়জন কিংবা ক্রেতার হাতে তুলে দিতে চান তাঁরা।

বৈসাবি এলেই পাড়ায় পাড়ায় কোমর তাঁতের ছন্দময় শব্দ শোনা যায়। কোমর তাঁতে নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য পোশাক তৈরির রীতি চলছে যুগ যুগ ধরে। আবার এর পাশাপাশি কেউ কেউ বিক্রির জন্যও পিনন-হাদি-রিনাই বুনছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে খাগড়াছড়ি শহরের মধুপুর এলাকায় এক তাঁতে দুটি রিনাই বুনছিলেন অনিকা ত্রিপুরা (২২)। তিনি বলেন, নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নকশা দিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে তিনি এক তাঁতে দুটি রিনাই বুনছেন। তাঁর ও প্রতিবেশী এক খালার জন্য। এখন উৎসবের আগেই দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। এ জন্য রাত–দিন কাজ করছেন তিনি।

পানছড়ির পুজগাং এলাকার সমরিকা চাকমা (৩১) বলেন, ‘সারা বছর কষ্ট করে কোমর তাঁতে পিনন-হাদি তৈরি করি। তখন অনেক সময় ন্যায্য দামও পাই না। বছরের এই সময়ে প্রচুর চাহিদা থাকে। অনেকে আগে থেকে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী নকশা দিয়ে যায়। তাই রাত-দিন খেটে তৈরি করছি কিছু লাভের আশায়।’