পথের বাধা উত্তরণের গল্প

ওয়াও উৎসবকে কেন্দ্র করে বসেছে বিভিন্ন ধরনের স্টল। তাতে বিক্রি হচ্ছে পোশাক, গয়না, খাবারসহ নানা পণ্য। গতকাল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে।  ছবি: প্রথম আলো
ওয়াও উৎসবকে কেন্দ্র করে বসেছে বিভিন্ন ধরনের স্টল। তাতে বিক্রি হচ্ছে পোশাক, গয়না, খাবারসহ নানা পণ্য। গতকাল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। ছবি: প্রথম আলো

‘মানুষ স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্নের পথে দারিদ্র্য, অসুস্থতা বা অন্য কোনো বাধা আসতে পারে। কিন্তু নারী হওয়ার কারণে স্বপ্ন দেখতে পারবে না, এমনটা কাম্য নয়। কিন্তু হচ্ছে। তখন কেমন অসহায় বোধ হয়, সেটা ভাষায় প্রকাশ কঠিন।’ কথাগুলো বলেন ওয়াও ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জুড কেলি। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ‘উইমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড—ওয়াও’ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলা একাডেমিতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ওয়াও ফাউন্ডেশনের অংশীদারত্বে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করেছে ব্রিটিশ কাউন্সিল। নারীর সম্ভাবনা বাস্তবায়নের পথে বাধাসমূহ খুঁজে বের করতে এবং সমস্যাগুলো নিয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা তৈরিতে ও সমাধান পেতে জুড কেলি ২০১০ সালে ওয়াও উৎসব শুরু করেন। উৎসবটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে ২০১৮ সালে ওয়াও ফাউন্ডেশন গঠন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় নারী উৎসবে পরিণত হয়েছে। উৎসবটি ছয়টি মহাদেশে ছড়িয়ে গেছে। এই উৎসবের মাধ্যমে নারীর শক্তিশালী রূপটি দেখছে বিশ্ব। এই উৎসবে নাটক, গান, কবিতা, আলোচনার মাধ্যমে নারীর সমস্যা তুলে ধরা এবং উত্তরণের পথ দেখানো হয়। এখানে আলোচনার পাশাপাশি বিকিকিনিরও সুযোগ আছে।

বক্তারা বলেন, বিশ্বব্যাপী নারীরা কেন পুরুষের তুলনায় কম সম্পদশালী, কেন নারীকে গৃহস্থালি কাজ বেশি করতে হয়, কেন নারীরা বেশি সহিংসতার শিকার হন—এসব বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা দরকার। এই আলোচনার দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মকে নিতে হবে। তারাই কেবল নারী-পুরুষের সম্পর্ক উন্নয়ন ও জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভবিষ্যৎকে একটি দারুণ কাঠামো দিতে পারে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ধর্ম নয়, পুরুষতান্ত্রিকতার কারণে নারীরা অনেক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন অজুহাতে মেয়েদের চারপাশে নানা দেয়াল তুলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের মেয়েরা ফুটবল খেলার সুযোগ পেয়ে বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এখানে আসতে তাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষে ঢাকা থিয়েটার একটি নাটিকা মঞ্চস্থ করে যেখানে এক কিশোরীর স্বপ্ন, বাধা এবং তা থেকে উত্তরণের চিত্র উঠে আসে। উৎসবকে কেন্দ্র বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন ধরনের স্টল বসেছে। তাতে বিক্রি হচ্ছে পোশাক, গয়না, খাবারসহ নানা পণ্য। একটি স্টলে বিক্রির জন্য রাখা একটি ওড়নায় লেখা ‘স্বপ্ন আমার অনেক বড়, হতে চাই স্বাধীন, করব আমার স্বপ্ন পূরণ, থাকব না অন্যের অধীন’। লেখাটি দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর।

এর পাশেই ‘ওয়াও বাইটস’ নামের এক অনুষ্ঠানে এক কর্মজীবী নারী নিজের জীবনসংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। এ সময় তাঁকে কী প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সমাধানে কী কী করেছেন, তা অন্যদের জন্য বিশদভাবে বলেন। আরেকটি তাঁবুর নিচে আত্মরক্ষার কৌশল নিয়ে কর্মশালা চলছে। তাতে নানান বয়সী নারীরা অংশ নিয়েছেন। ইংরেজি মাধ্যামের এক কলেজছাত্রী বলেন, নারী উৎসবে এসে দারুণ লাগছে। নারীদের উৎসাহ জোগাতে যে ইভেন্টগুলো রাখা হয়েছে, তা আধুনিক ও যুগোপযোগী।

দুই দিনের এই উৎসবে সামাজিক প্রথা, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, পুরুষ ও পুরুষত্ব এবং নারীবাদ নিয়ে প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া থাকবে সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারীদের বাস্তবতা, নিজেদের উন্নতির পথের বাধা এসব নিয়ে কর্মশালা, গল্প বলাসহ নারী দলের বিভিন্ন পরিবেশনা।