বাংলাদেশের বিকাশের স্বার্থেই অবাধ গণমাধ্যম জরুরি

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয়–বিষয়ক যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ডকে প্রথম আলো কার্যালয়ে স্বাগত জানান সম্পাদক মতিউর রহমান। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ৬ এপ্রিল। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয়–বিষয়ক যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ডকে প্রথম আলো কার্যালয়ে স্বাগত জানান সম্পাদক মতিউর রহমান। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ৬ এপ্রিল। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বাংলাদেশের সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশের স্বার্থেই অবাধ গণমাধ্যম নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয়–বিষয়ক যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতোই আইনের শাসন নিশ্চিত করা অপরিহার্য। কার্যকর গণতন্ত্রের ভিত্তিই হচ্ছে এসব উপাদান।

বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ শনিবার দুপুরে প্রথম আলো কার্যালয় পরিদর্শনে এসে মার্ক ফিল্ড এই মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, একটি কার্যকর গণতন্ত্র অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি আনতে পারে এবং সমৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করে দেয়।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রথম আলো কার্যালয়ে স্বাগত জানান সম্পাদক মতিউর রহমান। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসনসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের শুরুতে মার্ক ফিল্ড বলেন, তাঁর এবারের সফরের আলোচ্যসূচির ওপরের দিকেই আছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি। এ বছরের ১০ ও ১১ জুলাই কানাডাকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকার লন্ডনে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমবিষয়ক সম্মেলন করবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন চালু এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসঙ্গ টানেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কোনো উপদেশদাতা হিসেবে নয়, বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবেই বলছি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে সত্যিকার অর্থেই আমাদের উদ্বেগ আছে।’

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে মার্ক ফিল্ড বলেন, সাংবাদিকদের সুরক্ষার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের পূর্ণ অঙ্গীকার রয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর সারা বিশ্বে প্রায় ৮০ জন গণমাধ্যমকর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে, যা ছিল সবচেয়ে বাজে বছর। একই সময়ে দৈনন্দিন কাজ করতে গিয়ে কয়েক শ সাংবাদিককে কারাবরণ, অপহরণ কিংবা ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্য দেশকে নির্দেশ করছি—এমনটা ভাবার কারণ নেই। কারণ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের নিজের দেশেও অনেক বিতর্কের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’

প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ৬ এপ্রিল। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড। কারওয়ান বাজার, ঢাকা, ৬ এপ্রিল। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গুমের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মার্ক ফিল্ড বলেন, ‘এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সব সময় উচ্চকণ্ঠ আছি। যেকোনো দেশেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।’

ব্রেক্সিট নিয়ে যুক্তরাজ্যের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, ব্রেক্সিট নিয়ে পুরো পরিস্থিতি এখনো যথেষ্ট ঘোলাটে। তবে ব্রেক্সিট নিয়ে তাঁর নিজের অনুতাপ রয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের সরকারকে অনেক বেশি সময় দিতে হচ্ছে। ব্রেক্সিট থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে লোকজনের মধ্যে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাজ্যকে সবার ওপরে তুলে ধরার পাশাপাশি বিশ্বের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে না নেওয়ার নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ইউরোপ থেকেও যুক্তরাজ্য মুখ ফিরিয়ে নিতে চায় না। এর কারণ, ইউরোপ গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক আর নিরাপত্তা অংশীদার।

একাত্তরে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক বেশ নিবিড় বলে মন্তব্য করেন মার্ক ফিল্ড। তিনি বলেন, এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটা কয়েক শতকের না হলেও কয়েক দশকের তো বটেই। এটা লোকজনও বোঝেন।

মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান আবু জাকি, গণমাধ্যম শাখার প্রধান নিসার হুসেন প্রমুখ।