ভৈরবে পৌরসভার বর্জ্যে ভরাট হচ্ছে বিল

ভৈরবে বিলের এক পাশে পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে বিলটি সংকোচিত হচ্ছে। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
ভৈরবে বিলের এক পাশে পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে বিলটি সংকোচিত হচ্ছে। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার তোলা। ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি প্রবাহমান বিলে পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। বর্জ্য ফেলায় ধীরে ধীরে বিলের এক পাশ ভরাট হয়ে সংকুচিত হচ্ছে। এতে বিলটির স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বিলটি দৈর্ঘ্যে ২ কিলোমিটার। এক পাশে পৌর শহরের পলতাকান্দা, কালীপুর, রামশংকপুর। বিপরীতে পাশে আছে চণ্ডীবের। প্রবেশমুখ মেঘনার মোহনার সঙ্গে যুক্ত। মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য তিনটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। মেঘনার সঙ্গে যুক্ত থাকায় বিলটিতে সারা বছর পানিপ্রবাহ থাকে। প্রবাহ ও স্বচ্ছ পানির কারণে মাছও পাওয়া যায় অনেক। বিশেষ করে রামশংকপুর এলাকার অন্তত অর্ধশত জেলে পরিবারের জীবন–জীবিকার প্রধান উৎস এই বিলটি। দুই বছর ধরে চণ্ডীবের উত্তরপাড়া ও কালীপুর মধ্যপাড়ার মধ্যকার বিলের সেতুটির চণ্ডীবের প্রান্তটি বর্জ্য ফেলার স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা চণ্ডীবের এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ করে ফেলছেন বিলপাড়ে। এ কারণে বিলটি সংকুচিত হয়ে স্বাভাবিক প্রবাহ হারানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শামীম আহমেদ চণ্ডীবের উত্তরপাড়ার সমাজসচেতন হিসেবে পরিচিত। বয়সে তরুণ শামীম বলেন, ভৈরবের অভ্যন্তরীণ খাল–বিলগুলোর ওপর এখন শুধু বেসরকারি পর্যায়ে অবিচার চলছে না, সরকারি পর্যায়েও অদায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া হচ্ছে। তা না হলে বর্জ্য ফেলার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ বিলপাড় বেছে নিতে পারত না।

ভরাটস্থলটি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোমেন মিয়া। সমস্যাটি নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনিও বিব্রত। স্থানীয় লোকজনও এই বিষয়ে তাঁর কাছে প্রতিকার দাবি করছেন। কিন্তু উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। প্রতিকারে কিছু একটা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন মোমেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, শুধু যে চণ্ডীবের-কালীপুর মধ্যকার সেতু এলাকায় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, তা নয়। পৌর কর্তৃপক্ষের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে পৌর শহরের গাছতলাঘাট এলাকার একটি বিলও ভরাট হয়ে গেছে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে দেখা যায়, সেতুটির চণ্ডীবের প্রান্তের বর্জ্যের স্তূপ। বর্জ্য থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। মশা-মাছির আধিক্যও চোখে পড়েছে। একই প্রান্ত দিয়ে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা বেশ কয়েকটি সাবান কারখানার বিষাক্ত পানি নামছে। কারখানার বর্জ্যও ওই স্থানে ফেলা হচ্ছে। জেলেরা জানালেন বর্জ্য আর কারখানার বিষাক্ত পানির জন্য বিলটির পানিও বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। একসময় বিলের মাছ বেশ সুস্বাদু হলেও এখন নেই। এই বিলের মাছ রান্না করা হলে একধরনের উৎকট গন্ধ পাওয়া যায়।

ভৈরব পৌরসভা মর্যাদায় প্রথম শ্রেণির। অন্যান্য নাগরিক সুবিধা সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সাফল্য নেই। এখনো পৌরসভার নিজস্ব ডাম্পিং স্থান নেই। সেই কারণে পৌর কর্তৃপক্ষ শহরের বর্জ্য অপসারণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে। উপায় না পেয়ে বর্তমানে সড়কের দুই পাশ কিন্তু খাল–বিলের পাড়ে ফেলা হচ্ছে।

ফোন বন্ধ থাকায় পৌর মেয়র ফখরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে প্যানেল মেয়র মো. আল আমিন বলেন, ‘সমস্যার মূলে হলো ডাম্পিং ব্যবস্থা না থাকা। চেষ্টায় আছি লোকালয়ের বাইরে ডাম্পিং ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার।’ আর যা–ই হোক খাল–বিলের যেন ক্ষতি না হয়, সেটির বিষয়ে এখন থেকে সচেতন থাকার কথা জানান প্যানেল মেয়র।