উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আজও আন্দোলন চলছে

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আজ রোববারও চলছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল শনিবার সমঝোতা বৈঠক করেন রাজনৈতিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তবে কোনো ধরনের সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষার্থীরা তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।

গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস, পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম চালু হবে। সে অনুযায়ী আজ সকালে তা চালু হয়। হলগুলোও আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়।

তবে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তাঁরা আজ সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, উপাচার্যের পদত্যাগ বা তাঁর ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে লিখিত কাগজ হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা ক্লাসে ও একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। তাঁরা আন্দোলন থেকেও সরে আসবেন না।

গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বরিশাল সার্কিট হাউস মিলনায়তনে সমঝোতা বৈঠকটি হয়। সূত্র জানায়, বৈঠকে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস, নগর পুলিশ কমিশনার মো. মোশারফ হোসেন, জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান, শিক্ষাবিদ মো. হানিফ, প্রবীণ আইনজীবী এস এম ইকবাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. হাসিনুর রহমান এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১৫ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।

বৈঠক চলাকালে সার্কিট হাউসের সামনে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষার্থীরা ব্যানার নিয়ে অবস্থান করেন।

বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীরা যেসব দাবিতে আন্দোলন করছেন, সেসব দাবি যৌক্তিক। তাঁরাও সেসব দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। দীর্ঘ আলোচনার পর তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ থাকা হল, হলের ডাইনিং, পানিসহ সবকিছু চালু করা হবে এবং আজ রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম আগের মতো চলবে।

উপাচার্যের পদত্যাগ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের পদের মেয়াদ রয়েছে প্রায় দুই মাস। এই দুই মাসে তিনি যাতে কর্মস্থলে না আসেন, সে জন্য তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে একটি লিখিত সুপারিশ পাঠাবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।

পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁরা বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাঁরা একমত। কিন্তু উপাচার্যের পদত্যাগ বা ছুটির বিষয়ে কোনো লিখিত কাগজ হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তাঁরা ক্লাস-পরীক্ষাতেও অংশ নেবেন না। আজ রোববার সকালে তাঁরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেবেন ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, আজ সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হন। তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও তাঁরা ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি চালাচ্ছেন।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নগরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে চা-চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এতে শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে ও পাঁচ দফা দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। ওই দিন দুপুরে এক অনুষ্ঠানে উপাচার্য এস এম ইমামুল হক আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেন। এরপর গত বুধবার থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন।

শিক্ষার্থীদের অব্যাহত বিক্ষোভের মুখে গত বুধবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এ সময় তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিও জানান।