কক্সবাজারে হোটেলে পর্যটকেরা ঝুঁকিতে

>

• ৪২৩ হোটেল–মোটেল–গেস্টহাউসে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ত্রুটিযুক্ত
• বহুতল ভবনে আগুন নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা ফায়ার সার্ভিসের নেই
• অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা তদারক শুরু করেছে জেলা প্রশাসন

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে ৪২৩টি হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউসে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ত্রুটিযুক্ত। ৭ থেকে ১৩ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবনগুলোতে আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের নেই। ফলে একধরনের ঝুঁকিতে রয়েছেন পর্যটকেরা।

জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে হোটেল-মোটেলগুলোর অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা তদারক শুরু করেছে। ১ এপ্রিল সোমবার ভ্রাম্যমাণ আদালত অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ঠিকমতো না থাকায় সৈকত এলাকার বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ হোটেল, সি-ওয়ার্ল্ড রিসোর্ট ও উইন্ডি টেরেস হোটেলকে মোট এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। মঙ্গলবার একই অভিযোগে হাইপেরিয়ান, জিনিয়া, হোয়াইট অর্কিড ও পউষী বাংলাকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২০ এপ্রিলের মধ্যে হোটেলগুলোতে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা পুরোপুরি কার্যকর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম শেখ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

মো. সেলিম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ হোটেলের প্রতিটি ফ্লোরে অগ্নিনিয়ন্ত্রণব্যবস্থা দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এরপর নয়টি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকার নিয়ম থাকলেও আছে মাত্র চারটি করে। এ ছাড়া পানির উৎসমুখ অকেজো, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার অরক্ষিত অবস্থায় থাকা, ওয়াটার রিজার্ভে পর্যাপ্ত পানি না থাকা ও অকেজো, জরুরি বের হওয়ার পথ সরু থাকার বিষয়টি দেখতে পান ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব কারণে এই হোটেলকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০ এপ্রিলের মধ্যে এসব ত্রুটি সংশোধন করে কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।

এ ছাড়া জরিমানার শিকার অন্য হোটেলগুলোতেও একই রকম দুর্বলতা দেখেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ইন্সপেক্টর মো. শাহাদৎ হোসেন। তিনি বলেন, তাঁদের হিসাবে শহরের চার শতাধিক বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ঠিকমতো কার্যকর নেই। অল্প কয়েকটিতে থাকলেও তাতে লোকজন সরানোর পথ সরু। অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষকে বারবার সতর্ক করা হলেও তারা তোয়াক্কা করে না। তাই এই অভিযান।

সূত্রমতে, সৈকতের কলাতলী সড়কের দুই পাশে হোটেল-মোটেল জোনে গড়ে উঠেছে ৪৭০টি ৪ থেকে ১৩ তলাবিশিষ্ট বহুতল হোটেল ভবন। কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা শাফায়েত হোসেন বলেন, এর ৯০ শতাংশ, অর্থাৎ ৪২৩টি বহুতল হোটেল বেশি ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে ১২০টি (৭-১৩ তলা) ভবনের ৮০ শতাংশের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নেই। কেবল তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস ও রয়েল টিউলিপে ৯০ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ৭টি তারকা হোটেলেও ৫০ শতাংশ অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা কার্যকর আছে।

শাফায়েত হোসেন বলেন, ছয়তলা পর্যন্ত আগুন লাগলে তাঁরা নেভাতে সক্ষম। কিন্তু এর ওপরে তাঁদের সক্ষমতা নেই।

রাজধানীর রামপুরা থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন নিজাম উদ্দিন। ওঠেন বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ হোটেলে। নিজাম বলছিলেন, সৈকতের তারকা হোটেলেও অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ঠিকঠাক নেই জেনে অবাক হলাম। অথচ এ ব্যবস্থা সবার আগে হওয়া উচিত। পর্যটকেরা কক্সবাজার বেড়াতে এসে নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতেন না। কিন্তু রাজধানীতে কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর মানুষ অনেক সচেতন।

সি-ওয়ার্ল্ড রিসোর্টের নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) শহিদুল ইসলাম বলেন, এত দিন মালিকপক্ষ আগুন নিয়ে তাঁদের কিছু বলেননি। সম্প্রতি ঢাকায় একাধিক ভবনে আগুন নিয়ে হইচই শুরু হলে কক্সবাজারেও তৎপরতা শুরু হয়। তিনি সি-ওয়ার্ল্ডে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থার দুর্বলতার কথা স্বীকার করেন।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের বাইরে তাঁদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তাঁরা অনুসন্ধান চালিয়ে দেখছেন কোন হোটেলে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা কী রকম। বিশেষ করে ৭ থেকে ১৩ তলার হোটেল ভবনগুলোর নিরাপত্তার দিকে তাঁরা বিশেষ নজর দিচ্ছেন। পর্যটকদের ঝুঁকিতে রেখে কোনো ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।