যত্রতত্র সিলিন্ডারের গুদাম

ঝালকাঠি শহরের আড়তদার পট্টির হরিসভা মোড় এলাকায় সিলিন্ডার গুদামজাত করা  হচ্ছে।  ছবি: প্রথম আলো
ঝালকাঠি শহরের আড়তদার পট্টির হরিসভা মোড় এলাকায় সিলিন্ডার গুদামজাত করা হচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠিতে আবাসিক এলাকায় এলপি গ্যাসের গুদাম গড়ে উঠেছে। অনেক আবাসিক বাড়ির ফ্ল্যাটও গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এসব গুদামে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি না থাকায় আবাসিক এলাকায় ঝুঁকি বাড়ছে।

শহর ঘুরে দেখা যায়, ঝালকাঠির ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে শুরু করে কলেজ মোড় পর্যন্ত খুচরা গ্যাসের দোকান আছে ১০–১২টি। শহরের বাণিজ্যিক এলাকা আড়তদারপট্টি, কাপুড়িয়া, ডাক্তারপট্টি ও উপজেলা পরিষদের সামনে এলপি গ্যাসের এজেন্টরা গুদাম ভাড়া নিয়ে সিলিন্ডার মজুত করছেন। প্রতিদিন সকালে ট্রাকে করে এসব গুদামে গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার আসছে–যাচ্ছে। একাধিক গুদাম ঘুরে দেখা গেছে, ট্রাক থেকে গ্যাস সিলিন্ডার শ্রমিকেরা মাথায় নিয়ে গুদামে ফেলছেন, যা বিস্ফোরিত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যেকোনো সময়। প্রতিটি গুদামের আশপাশে অসংখ্য বসতবাড়ি রয়েছে। এদিকে শহরের মনিহারি দোকান থেকে শুরু করে গ্রামের ওষুধের ফার্মেসি ও কাপুড়ের দোকানেও বিক্রি করা হচ্ছে এই গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার।

ঝালকাঠির রোনলস সড়কের একজন লাইসেন্সধারী সিলিন্ডার ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাতারাতি বিভিন্ন স্থানে যেভাবে গ্যাস বিক্রির দোকান হচ্ছে, এর দায়ভার কে নেবে। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাসে দু–তিনটি অভিযান চালালে এগুলো রোধ করা সম্ভব।

অনেক খুচরা পেট্রল বিক্রেতার দোকানেও গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার বিক্রি করতে দেখা যায়। একটি গুদামে কী পরিমাণ দাহ্য পদার্থ রাখার নিয়ম আছে, তা–ও জানা নেই এসব গুদামমালিকের। গুদামে আগুন নেভানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই। লাইসেন্স ছাড়া অবাধে চলছে এই ব্যবসা।

বিস্ফোরক আইন, ১৮৮৪ ও গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা, ১৯৯১ অনুযায়ী লাইসেন্স ব্যতীত এলপিজি গ্যাস মজুত ও বিক্রয় করা যাবে না। আগুন নেভানোর জন্য যন্ত্রপাতি রাখতে হবে। এ আইন অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর জেল জরিমানা হতে পারে।

ডাক্তারপট্টি এলাকার বাসিন্দা মনোজ কুমার বলেন, এভাবে গ্যাস ব্যবসায়ীরা আবাসিক এলাকায় গুদাম ভাড়া নিয়ে গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার মজুত করেন। আর তাঁরা পরিবার নিয়ে অগ্নিঝুঁকিতে থাকেন। এ বিষয়ে প্রশাসনকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

শহরের আড়তদারপট্টি হরিসভা মোড়ে মাসুম তালুকদার বলেন, বাড়ির মালিকেরা বেশি ভাড়ার কারণে আবাসিক এলাকায় গুদাম ভাড়া দিচ্ছেন। এ ধরনের গ্যাসের গুদাম থেকে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, আগুনে ক্ষয়ক্ষতির দিক দিয়ে ঝালকাঠি শহর বরিশালের চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে আছে। বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন সচেতনতার সৃষ্টি হয়। তারপরও তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন। গত মাসে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন। তবে তাঁদের কাছে সিলিন্ডার গুদামের কোনো পরিসংখ্যান বা তথ্য নেই।