শিক্ষা বিভাগের ২১ শতক জমি দখলে নিয়ে স্থাপনা

কুলাউড়ার কটারকোনা বাজারের কাছে শিক্ষা বিভাগের জমিতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা।  ছবি: প্রথম আলো
কুলাউড়ার কটারকোনা বাজারের কাছে শিক্ষা বিভাগের জমিতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা। ছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় শিক্ষা বিভাগের ২১ শতক জমি স্থানীয় এক ব্যক্তি দখল করে স্থাপনা বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় এক বাসিন্দা উপজেলা প্রশাসন ও শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল লাইছ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের জমি কেউ অবৈধভাবে দখলে রাখতে পারবেন না। অভিযোগের কপি এখনো তাঁর নজরে পড়েনি। তবে খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন তিনি।

সমরজিৎ দাস নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা গত ১২ মার্চ ওই লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়ার হাজীপুর ইউনিয়নের কটারকোনা বাজারের কাছে ১৯২০ সালে স্থানীয় বাসিন্দা প্রয়াত গোপীনাথ দাসের দান করা ১৫ শতক এবং ৬ শতক সরকারি খাস জমিতে নয়াবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। পরবর্তী সময়ে একই এলাকার আবদুস সালাম চৌধুরী বিদ্যালয়ের নামে আরও পাঁচ শতক জমি দান করেন। ১৯৬২ সালে সালাম চৌধুরীর দান করা জমিতে সরকারি উদ্যোগে একটি আধপাকা বিদ্যালয় ভবন নির্মিত হয়। অবশিষ্ট জমি বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। এরপর বিদ্যালয়ে একটি পাকা ভবন নির্মাণের জন্য বাড়তি জমির দরকার পড়ে। এ অবস্থায় একই এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান কটারকোনা বাজারের কাছে অন্য একটি স্থানে ৩৩ শতক জমি দান করেন। ২০০৬ সালে ওই জমিতে পাকা ভবন স্থাপনের পর সেখানে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সেটেলমেন্ট বিভাগের জরিপে বিদ্যালয়ের বর্তমান ৩৩ শতক ও আগের ২৬ শতকসহ ৫৯ শতক জমি ‘বাংলাদেশ সরকার, পক্ষে: শিক্ষা বিভাগ, মৌলভীবাজার’–এর নামে রেকর্ড হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, নতুন জমিতে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের পর ভূমিদাতা হাবিবুর রহমান আগের ২১ শতক জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছেন। তিনি সেখানে কয়েকটি দোকানঘর ও মালামাল রাখার জন্য গুদাম নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া ওই জমির একাংশে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। সেটিও হাবিবুর ভাড়া দিয়েছেন।

৪ এপ্রিল সরেজমিন দেখা যায়, কটারকোনা বাজার-মনু সড়কে মনু নদের পাশ ঘেঁষে বিদ্যালয়ের আগের জমি পড়েছে। সেখানে বিদ্যালয়ের আধপাকা পুরোনো ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এর পাশে রয়েছে টিনশেডের ছয়টি দোকানঘর, ছয়টি গুদাম ও কটারকোনা ইসলামিক একাডেমি নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

ছয়টি দোকানের একটি হারুন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস। এটির মালিক হারুন মিয়া। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে ৩০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে দোকানটি হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন। আরেক দোকান হক অ্যালুমিনিয়াম স্টোরের মালিক কাজল মিয়া বলেন, তিনি জামানত দিয়েছেন ১৫ হাজার টাকা।

আর কটারকোনা ইসলামিক একাডেমির প্রধান শিক্ষক জহির রায়হান বলেন, স্থানীয় কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেছেন। জমির মালিক হিসেবে হাবিবুর রহমানকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টার পর গতকাল শনিবার হাবিবুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দাবি করেন, বিদ্যালয়ের নতুন জমি দান করার সময় বিদ্যালয়ের তৎকালীন পরিচালনা কমিটির সদস্যরাসহ এলাকার লোকজন বিনিময় হিসেবে পুরোনো জমি তাঁকে ফেরত দেন। এ ব্যাপারে কমিটির লিখিত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ কারণে ওই জমি তাঁরা ভোগদখল করছেন। শিক্ষা বিভাগের নামে রেকর্ড হওয়া জমির মালিকানা এ রকম পরিবর্তন সম্ভব কি না, এ প্রশ্নে হাবিবুর বলেন, ‘জমি ফেরত পেতে আমরা প্রক্রিয়া করিনি। তবে করব।’

উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মামুনুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা শুনেছি, নয়াবাজার বিদ্যালয়ের কিছু জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। ওই জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনটি অপসারণেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’