বাঁধের ক্ষতি করে বালু উত্তোলন

>* এই বাঁধের কারণে গত বন্যায় মানুষ তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে গত চার-পাঁচ মাস ধরে বাঁধের কাছ থেকে বালু তুলতে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
* বালুর সঙ্গে আসা পানি আবার বাঁধের ওপরই পড়ছে। এতে বাঁধের নিচের দিকে কিছুটা সিসি ব্লক (কংক্রিটের) সরে গেছে।
* বালু তোলার অংশে বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে; যা কিনা এবারের বন্যায় ভেঙেও যেতে পারে। বালুর ট্রাকের কারণে রাস্তাঘাটও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।  অনেকেই বালু তুলছেন। প্রশাসন অনেককেই জরিমানাও করেছে। কিন্তু ওই ইউপি সদস্য ও তাঁর ভাই ফজলুলের বালু উত্তোলন কেউ বন্ধে করতে পারেনি।
ইসলামপুরের যমুনা নদী
ইসলামপুরের যমুনা নদী

শতকোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি নির্মিত একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও তীর সংরক্ষণ বাঁধকে ক্ষতি করে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় যমুনা নদীর গুঠাইল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মো. মজনু মিয়া নামের এক ইউপি সদস্য বালু উত্তোলন করছেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় বালু উত্তোলনে কেউ তাঁকে বাধা দিচ্ছেন না।

মজনু মিয়া উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। তিনি ওই ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদকও। তিনি ওই এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এই বালুর ঘাটটির পুরো দেখবাল করেন তাঁর বড় ভাই ফজলুল হক। ফজলুল আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। তাঁদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো লোক ওই এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ৪-এর খ-ধারায় উল্লেখ আছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন এবং অন্যান্য গুরুত্বর্পূণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্য থেকে বালু তোলা যাবে না।

গত শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, চিনাডুলী ইউনিয়নের গুঠাইল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর বিশাল বালুর স্তূপ রাখা। বাঁধের প্রায় দেড় শ মিটার সামনেই বিশাল নৌকার মধ্যে দুটি খননযন্ত্র। ওই নৌকা থেকে বাঁধের ওপর দিয়ে বালু স্তূপের মধ্যে রাখা হচ্ছে। বালুর সঙ্গে আসা পানি আবার বাঁধের ওপরই পড়ছে। এতে বাঁধের নিচের দিকে কিছুটা সিসি ব্লক (কংক্রিটের) সরে গেছে। ওই স্তূপ থেকে বালু ট্রাকে ভরা হচ্ছে। বালুভর্তি ট্রাক বাঁধের ওপর দিয়েই যাচ্ছে। এতে বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফেটে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, শতকোটি টাকার বাঁধ। যেটা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। এই বাঁধের কারণে গত বন্যায় মানুষ তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তবে গত চার-পাঁচ মাস ধরে বাঁধের কাছ থেকে বালু তুলতে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। অনেকেই বালু তুলছেন। প্রশাসন আবার অনেককেই জরিমানাও করেছে। কিন্তু ওই ইউপি সদস্য ও তাঁর ভাই ফজলুলের বালু উত্তোলন কেউ বন্ধ করতে পারেনি। বালু তোলার অংশে বাঁধের ক্ষতি হচ্ছে; যা কিনা এবারের বন্যায় ভেঙেও যেতে পারে। বিশাল আকারের বালুভর্তি ট্রাক একটি বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচল করলে বাঁধটির কী অবস্থা হতে পারে, এটা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। বালুর ট্রাকের কারণে রাস্তাঘাটও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে এই বালু উত্তোলন বন্ধ করার দরকার।

বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত করে একদম বাঁধের ওপর খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন ঠিক কি না এবং এতে বাঁধও ভেঙে যাচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে মজনু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাঁধ ভাঙবে না। ড্রেন করা আছে। ৩০ লাখ টাকা দিয়ে নৌকাসহ খননযন্ত্র কিনেছি। বালু উত্তোলনে কেউ নিষেধ করেনি। তবে সবাকেই ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করছি। এ ছাড়া আমার এখানে প্রশাসনের লোকজন একটু কমই আসেন।’

চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই স্থানে আমার পরিষদের একজন বালু তোলেন বলে শুনেছি। কিন্তু ওই ইউপি সদস্যকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি (ইউপি সদস্য) আমাকে বলেন, খননযন্ত্র নাকি তাঁর ভাই ফজলুলের। বালু উত্তোলন বাঁধের জন্য ক্ষতিই। এ বিষয়টি নিয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভাতেও আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি আরও খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে
আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে।’ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ওই বালু উত্তোলনকারী মিথ্যা কথা বলেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যেই ওই বালু উত্তোলন বন্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’