ডিএনসিসির কাঁচাবাজার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে

পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিভিন্ন জায়গায় দেয়ালের আস্তর উঠে গেছে। এরই মধ্যে ব্যবসা করছেন দোকানিরা। গতকাল গুলশান ২ নম্বরের ডিএনসিসির কাঁচাবাজারে।  প্রথম আলো
পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিভিন্ন জায়গায় দেয়ালের আস্তর উঠে গেছে। এরই মধ্যে ব্যবসা করছেন দোকানিরা। গতকাল গুলশান ২ নম্বরের ডিএনসিসির কাঁচাবাজারে। প্রথম আলো

ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে প্রায় ছয় বছর আগে। জরাজীর্ণ-ভগ্নদশা। ছাদের পলেস্তারা খসে গেছে, কংক্রিট ও রড দেখা যাচ্ছে। এমন দশা গুলশান ২ নম্বরে অবস্থিত ডিএনসিসি উত্তর কাঁচাবাজারের।

ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সেখানে ব্যবসা করছেন দোকানিরা। তাঁরা বলছেন, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করা হলে তাঁদের সরে যাওয়ার সুযোগও নেই। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসা করতে হবে। আর ক্রেতারা বলেন, সেখানে এত দিন অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েও কোনো উদ্যোগ ছিল না। সম্প্রতি গুলশান-১–এর ডিএনসিসি কাঁচাবাজারে আগুনের পর ব্যবসায়ীরা কিছুটা সতর্ক হয়েছেন।

গতকাল রোববার গুলশান ২ নম্বরের কাঁচাবাজারে দেখা যায়, নিচতলায় শাকসবজি ও মুদি মালামাল বিক্রি হচ্ছে। একতলার ছাদ বিভিন্ন স্থানে পলেস্তারা উঠে কংক্রিট ও রড দেখা যাচ্ছে। দেয়ালের আস্তরও খসে পড়ছে, ফাটল দেখা দিয়েছে। দোতলায় কম্পিউটার কম্পোজ, ফটোকপি আর বিভিন্ন যান্ত্রিক সরঞ্জাম সারাইয়ের দোকান। আর তৃতীয় তলায় বিভিন্ন পণ্যের গুদাম। সব মিলিয়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ১১০টির বেশি দোকান আছে।

উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের মার্কেট ভবনগুলো ৩০ থেকে ৫০ বছরের পুরোনো। গুলশান ২ নম্বরের উত্তর কাঁচাবাজার ভবনটি ১৯৮৫ সালে তৈরি। এর জরাজীর্ণ অবস্থা সম্পর্কে তাঁরা অবগত। এটি ছাড়াও আরও কয়েকটি বাজার ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে ডিএনসিসি। ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায় আছে গুলশান ১ নম্বর সুপার মার্কেট, কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট, কারওয়ান বাজার ১ নম্বর ও ২ নম্বর পাকা মার্কেট ভবন, গাবতলীর আমিনবাজার ট্রাক টার্মিনাল ভবন, মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচা ও পাকা মার্কেট ও রায়েরবাজার মার্কেট। তবু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনগুলো ব্যবহার করছেন ব্যবসায়ীরা।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর মার্কেটগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন গুলশান ২ নম্বরের উত্তর কাঁচাবাজার ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু তা আমলে নেননি ব্যবসায়ীরা বা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতারা বলেন, এই ভবন দেখলেই বোঝা যায় তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। এর জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু ঝুঁকি ব্যাপারে সবাই যেন নির্বিকার। দেদার ব্যবসা হচ্ছে। ক্রেতাদের কোনো উপায় না থাকায় এখান থেকেই বাজার করতে হয় ঝুঁকি মাথায় নিয়ে। এমনটি ভবনের সামনে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে কোনো সাইনবোর্ড বা বার্তাও নেই।

উত্তর কাঁচাবাজার মার্কেট সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম এ মালেক বলেন, ‘ভবনের ঝুঁকির বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। আমরা অস্থায়ী ব্যবসায়ী, ব্যবসা করছি। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কি না, সে বিষয়ে আমরা এখনো কোনো চিঠি পাইনি। এই মার্কেটটি ডিএনসিসির, তারা চাইলে নতুন করে তৈরি করতে পারে।’

ভবনের দোতলার মিজান হার্ডওয়্যার অ্যান্ড পেইন্টের ব্যবসায়ী মো. মিজান বলেন, আগে ভবনে অগ্নিনিরাপত্তারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। গুলশান ১ নম্বরে ডিএনসিসির কাঁচাবাজারে আগুন লাগার পর থেকে দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। তিনটি দোকানের জন্য একটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার দেওয়া হয়েছে। এখানে যেসব বৈদ্যুতিক লাইন আছে, সেগুলো পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। আর এই ভবনটি দোতলা ছিল। তিনতলা করেছে মার্কেট কমিটির লোকজন। এতে ভবনের ওপর চাপ পড়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএনসিসির নয়টি স্থাপনাকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট নিয়ে একটি সভা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা কিছু প্রক্রিয়া শেষ করে সিদ্ধান্ত নেব। এরপর সেগুলো বাস্তবায়ন করা শুরু হবে।’ তবে গুলশান ২ নম্বরের কাঁচাবাজার নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তের কথা জানাতে পারেননি তিনি।