আ.লীগ নেতার 'ভাড়াটে খুনি'র স্বীকারোক্তি

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসাহাক হোসেনকে খুনের পরিকল্পনা হয় জেলখানায় বসে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে খুনি ভাড়া করা হয়। তাঁদের একজনের নাম হারুন প্রামাণিক। তিনি ঘটনার দেড় মাস আগে থেকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নজিপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ ওরফে লিটুর বাড়িতে যাতায়াত করতে থাকেন। একদিন সুযোগ বুঝে ইসাহাককে পৌরসভার নিজ বাড়িতে হারুন ও তাঁর সহযোগীরা এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে খুন করেন।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের প্রায় পাঁচ মাস পর গত রোববার গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার ডাইনকিনি এলাকা থেকে হারুন প্রামাণিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে গতকাল সোমবার আদালতে হাজির করা হলে আওয়ামী লীগ নেতা ইসাহাক (৭০) খুনের বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। হারুনের বাড়ি রানীনগর উপজেলার ভিটি উত্তরপাড়া গ্রামে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পত্নীতলা থানার পরিদর্শক জহুরুল হক ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, জমি ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা ইসাহাকের সঙ্গে নজিপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদের বিরোধ চলে আসছিল। ইসাহাক খুনের দুই-তিন মাস আগে আবুল কালাম আজাদ নওগাঁ জেলহাজতে থাকার সময় হারুনসহ মামলার অন্য আসামিদের সঙ্গে পরিচয় হয়। হারুন ও তাঁর সহযোগীরা কাউন্সিলর আবুল কালামের কাছ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার চুক্তিতে ইসাহাককে খুন করতে রাজি হন। জেল থেকে জামিনে বের হয়ে ইসাহাককে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হত্যার ঘটনার দেড় মাস আগে থেকে ভাড়াটে খুনি হারুন কবিরাজ বেশে কাউন্সিলরের বাড়িতে যাতায়াত করতে থাকেন। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর ইসাহাককে হত্যার উদ্দেশ্যে খুনিরা ইসাহাকের বাড়ির গ্যারেজে অবস্থান করছিলেন। ওই দিন রাত নয়টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় অফিস থেকে ইসাহাক নিজের গাড়িতে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর বাড়ি ফেরার বিষয়ে খুনিদের মুঠোফোনে সংকেত দেন কাউন্সিলর আবুল কালাম। ইসাহাক গাড়ি নিয়ে বাড়িতে পৌঁছামাত্রই খুনিরা তাঁকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। এ সময় তাঁর গাড়ির চালকও আহত হন। পরে ইসাহাকের মৃত্যু হয়।

পত্নীতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিমল চন্দ্র বলেন, হারুনকে গ্রেপ্তার এবং তাঁর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ফলে আওয়ামী লীগ নেতা ইসাহাক হোসেন হত্যার পুরো রহস্য এখন উদ্‌ঘাটিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আরও কিছু খুনির নাম পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে তাঁদের নাম বলা যাবে না। তাঁরা পলাতক। তাঁদেরও শিগগির গ্রেপ্তার করা হবে।

গত বছরের ৪ ডিসেম্বর নিজের বাড়ির গ্যারেজে ছুরিকাঘাতে খুন হন ইসাহাক হোসেন। পরদিন পত্নীতলা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার পর ওই দিনই এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নজিপুর পৌরসভার কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ, তাঁর ভাই লোকমান হোসেন ও ইসাহাক হোসেনের বাড়ির কেয়ারটেকার আনিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁরা এখনো কারাগারে। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র এখনো আদালতে জমা দেয়নি পুলিশ।