মূল্যবোধকে নাড়িয়ে দিয়েছে এই নৃশংসতা

রাশেদা কে চৌধূরী
রাশেদা কে চৌধূরী

ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে একজন মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার যে ঘটনা ঘটল, সেটিকে শুধু নৃশংস বললে কম বলা হবে। ওই ঘটনা আমাদের বিবেক ও সমস্ত মূল্যবোধকে নাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা মূল্যবোধ শিখে থাকে, সেখানেই নৃশংস এই ঘটনা ঘটল। তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্ম মূল্যবোধ শিখবে কোথায়?

ঘরের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ জায়গা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র আরও বেশি সুরক্ষিত থাকার কথা। এমন একটি স্থানে একজন ছাত্রীকে তার জীবনের সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হলো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর মানবিক সত্তা বিকশিত হয়ে থাকে। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের হাতে একজন ছাত্রী লাঞ্ছিত হওয়া ন্যক্কারজনক। ছাত্রীটি বিচার চাইতে গিয়েছিল, মামলা করেছিলেন তার বাবা। এরপর দুর্বৃত্তরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের পক্ষ নিয়ে যে নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটা চিন্তারও বাইরে।

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি নিয়ে আমরা গর্ব করি। কিন্তু এ ধরনের ঘটনার কারণে সেই গর্ব ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায়। কেউ কেউ বলেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এমন ঘটনা দিয়ে সবকিছু বিবেচনা করা ঠিক না। বাস্তবে এ ধরনের ঘটনা কিন্তু ঘটেই চলেছে। এটা উদ্বেগের কারণ।

আমাদের সমাজে অপরাধ করে পার পাওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য দুটি কাজ করতে হবে। একটি হলো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। এটি যতক্ষণ পর্যন্ত না হবে, ততক্ষণ এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

আরেকটি বিষয় হলো, আমরা মনে করে থাকি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেবল শিক্ষার্থীরাই মূল্যবোধ শিখবে। কিন্তু যেখানে শিক্ষকেরা পর্যন্ত মূল্যবোধের অবক্ষয়ের স্রোতে ভাসছেন, সেখানে বলার আর কিছু থাকে না। আমরা মাঝেমধ্যে কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করার খবর শুনি। এটা প্রায় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকে। অনেক ঘটনাই আবার প্রকাশিত হয় না। আর যেগুলো প্রকাশিত হয়, সেগুলোর বিচার কতটা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমরা এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যা অপরাধী শিক্ষকদের বার্তা দেবে।

নৃশংসতার শিকার ছাত্রীটি এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার এবং ছাত্রীটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালিত হবে। পাশাপাশি এটাও প্রত্যাশা করি, ক্রমাগতভাবে নারীর প্রতি সহিংসতার যে ধরনের দৃষ্টান্ত উঠে আসছে, সেগুলোর লাগাম টানা হবে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা