ইটভাটায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শ্রমিকদের সন্তানেরা

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের বেরাচাক্কি এলাকার মেঘলা ব্রিক্স নামের ইটভাটায় কাজ করেন তাসলিমা আক্তার ও তারা মিয়া দম্পতি। তাঁদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায়। দুই ও চার বছরের দুটি শিশুসন্তানকে নিয়ে তাঁরা ইটভাটতেই থাকেন। এ দম্পতি যখন ইটভাটায় কাজ করেন, তখন শিশু দুটি ইটভাটার মধ্যেই খেলা করে। ভাটার ধুলাবালি ও ধোঁয়ার মধ্যেই তারা থাকে। এতে শিশু দুটির স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

কেবল তাসলিমা আক্তার ও তারা মিয়া দম্পতির সন্তান নয়, শরীয়তপুরের ৫৪টি ইটভাটার পাঁচ শতাধিক শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইটভাটায় কোনো অবস্থাতেই শিশুরা নিরাপদ নয়। ইটভাটার পরিবেশে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের স্বাস্থ্যই ঠিক থাকে না। ওই পরিবেশে শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরে ছয়টি উপজেলায় ৫৪টি ইটভাটা রয়েছে। ইটভাটায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করেন। শ্রমিকদের অধিকাংশেরই বাড়ি জেলার বাইরে। এসব শ্রমিক চুক্তিভিত্তিক কাজ করে থাকেন। বছরে তাঁরা সাত–আট মাস ইটভাটায় কাজ করেন। এ সময় তাঁরা পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যদের নিয়ে আসেন। তখন কাজের স্বার্থে ভাটার মালিকেরা ভাটার ভেতর তাঁদের থাকার জন্য অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে দেন।

মেঘলা ব্রিক্সের নারী শ্রমিক তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। নিজেদের এলাকায় কাজ না পেয়ে দূরে এসেছি। বাড়িতে শিশুদের দেখে রাখার কেউ নেই। তাই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। বুঝতে পারি, ধুলাবালিতে তাদের ক্ষতি হচ্ছে। তারপরও কিছু করার নেই। আল্লাহই তাদের নিরাপদে রাখবেন।’


সদর উপজেলার চরডোমসার এলাকার খান ব্রিক্সে ১৫টি শ্রমিক পরিবারের বসবাস। ওই পরিবারগুলোতে অন্তত ৩৫টি শিশু রয়েছে। তারা ওই ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালুর মধ্যেই খেলাধুলা করে।

খান ব্রিক্সের শ্রমিক কিশোরগঞ্জের ইটনার বড়হাতকোবল গ্রামের লতিফা বেগম বলেন, ‘আমাদের কথা কে ভাবে? কাজ না করলে খাওয়াবে কে? বাধ্য হয়ে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে রাখতে হচ্ছে।’

জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘শ্রমিকেরা গরিব মানুষ। তাঁরা ইটভাটার বাইরে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে পারেন না। তাই তাঁরা অনুরোধ করেন, ভাটার পাশে ঘর নির্মাণ করে দিতে। চেষ্টা করি, ভাটা থেকে একটু দূরে ভালো পরিবেশে ঘর নির্মাণ করে দিতে। তাঁদের সঙ্গে শিশুদের ইটভাটায় না আনার পরামর্শও দেওয়া হয়।’

জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, ‘ইটভাটায় কোনো শিশুশ্রমিক যাতে কাজ না করে, সে বিষয়ে নজরদারি রয়েছে। নারী শ্রমিকদের সঙ্গে শিশুরা ইটভাটায় বসবাস করে, এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো শিশুই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকবে না।’