রহস্যের কিনারার আশা আসামির আত্মসমর্পণে

সিলেট নগরের মদিনা মার্কেট এলাকায় ফল ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন হত্যা মামলার একমাত্র আসামি পলাতক আবদুর রহমান আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। গতকাল সোমবার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। পরে আদালত জামিন নামঞ্জুর করলে পুলিশ রহমানকে জেলে পাঠায়।

গত ৩০ জানুয়ারি রাতে সাহাব উদ্দিন (৪০) হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। পরদিন এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ভাই সাজ্জাদ আহমদ বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেছিলেন। এতে আবদুর রহমানকে একমাত্র আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। ঘটনার ২ মাস ৮ দিনের মাথায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এ কে এম শমিউল আলম প্রথম আলোকে জানান, হত্যা মামলার একমাত্র আসামি আবদুর রহমান। তিনি পলাতক থাকা অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন নিয়েছিলেন। নিম্ন আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে জামিন দেওয়া হয়েছিল। গতকাল জামিনের মেয়াদ শেষ হলে সিলেট মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম মো. আবুল কাশেমের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন রহমান। এ সময় রহমানের পক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু বাদীপক্ষ এতে আপত্তি জানায়। শুনানি শেষে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

সিলেট নগরের পশ্চিম-উত্তর দিকের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক এলাকা মদিনা মার্কেট। সেখানকার ফলবাজারে ‘সাহাব উদ্দিন ফলভান্ডার’ নামে একটি ফলের দোকানের মালিক সাহাব উদ্দিন। ব্যবসার সুবাদে তিনি মদিনা মার্কেটের হাবিব মিয়ার কলোনির একটি কক্ষে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ৩১ জানুয়ারি ভোরে বসতঘরের কক্ষ থেকে সাহাব উদ্দিনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান তিনি। তাঁর মাথায় গভীর ক্ষত ছিল। প্রতিবেশীসহ ব্যবসায়ীরা বলছেন, কলোনির ওই কক্ষে সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে আবদুর রহমান থাকতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি লাপাত্তা থাকায় প্রাথমিকভাবে তাঁকে খুনি ধারণা করে মামলা করা হয়। রহমান নগরের আম্বরখানা এলাকায় ফলের ব্যবসা করতেন। ঠিক কী করণে এই হত্যা—এ বিষয়ে পুলিশসহ সাহাব উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরাও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছিলেন না।

সিলেট কোতোয়ালি থানার সহকারী কমিশনার (এসি) মো. ইসমাইল বলেন, একমাত্র আসামি পলাতক থাকায় খুনের কারণও উদ্‌ঘাটিত হচ্ছিল না। এ জন্য মামলাটির তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে।

সাহাব উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সিলেটের ওসমানীনগর থানায় একইভাবে আরও একজন ব্যবসায়ী নিজ বসতঘরে খুন হয়েছিলেন। ওসমানীনগর থানা-পুলিশ দুই দিনের মাথায় ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং খুনের কারণ উদ্‌ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু মহানগর পুলিশ সাহাব উদ্দিন হত্যা মামলার একমাত্র আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারছিল না বলে খুনের কারণও উদ্‌ঘাটিত হচ্ছিল না। এ নিয়ে গত ৩১ মার্চ প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।

মামলার একমাত্র আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করায় হত্যার কারণ উদ্‌ঘাটনের আশা করছেন সাহাব উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা। গতকাল তাঁর ভাই ও মামলার বাদী সাজ্জাদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুই মাসের বেশি সময় ধরে ঘটনাটি নিয়ে বড় পেরেশানে ছিলাম। একমাত্র আসামি আত্মসমর্পণ করায় আমরা আশা করছি খুনের কারণ উদ্‌ঘাটিত হবে এবার।’