আ.লীগের চেয়ারম্যানপ্রার্থী শাহিনুল গ্রেপ্তার

শাহিনুল ইসলাম
শাহিনুল ইসলাম

কুমিল্লার তিতাস উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শাহিনুল ইসলামকে (৪১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসা থেকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করেন।

ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছির উদ্দিন মৃধা বলেন, শাহিনুলকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন সংঘটিত সহিংসতার দুটি মামলা ও জিয়ারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনির হোসাইন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল সোমবার তাঁকে কুমিল্লার আমলি আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক তাঁকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

শাহিনুল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি ২০১৪ সালে এ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পান। এখানে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী হন পারভেজ হোসেন সরকার। তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। ভোটের দিন কয়েকটি কেন্দ্রে সহিংসতা, কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের কারণে নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।

জানতে চাইলে বিদ্রোহী প্রার্থী পারভেজ হোসেন সরকার বলেন, ‘এ নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।’

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মার্চ এ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে গোলযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, মারামারি ও জাল ভোট হয়। বেলা দুইটায় এখানে ভোট স্থগিত করা হয়। মারামারির ঘটনায় গত বুধবার শাহিনুলের বিরুদ্ধে তিতাস থানায় মামলা হয়। রোববার রাতে বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা হয়। এ দুই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে তিতাস থানায় পাঁচটি ও দাউদকান্দি থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি হত্যা মামলা।

শাহিনুল মনাইরকান্দি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও বলরামপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন সিকদারের বড় ছেলে। জানতে চাইলে আক্তার হোসেন বলেন, ‘তিতাস বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা ছিল। আমার ছেলে এখানে দলের অন্যদের নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁকে হয়রানি করার জন্য একের পর এক অসত্য মামলা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে এভাবে হয়রানি করার নজির আর নেই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাঁকে ঠিকমতো প্রচার চালাতে দেয়নি। বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে তাঁকে ও তাঁর অনুসারী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হয়েছে। এখন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। আমি ছেলের মুক্তি চাই।’

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় মো. শাহিনুল ইসলাম উল্লেখ করেন, ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর দাউদকান্দি থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। এ মামলার তদন্ত চলছে। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর দাউদকান্দি থানায় মনির হোসাইন চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় তিনি আসামি। এ মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। মামলাটি কুমিল্লার আমলি আদালতে বিচারাধীন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আরও ছয়টি মামলা ছিল।

নির্বাচনের আগে হলফনামার মামলার তথ্য সম্পর্কে শাহিনুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘মনির হোসাইন হত্যা মামলায় ১৩ জনকে আসামি করে মামলা হয়। এ মামলার এজাহারে আমার নাম ছিল না। পরে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমাকে পরে আসামি করা হয়।’

জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী সহিংসতার দুটি মামলা ও মনির চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় পরোয়ানা থাকায় ঢাকা থেকে শাহিনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।