কিশোরীদের উচ্চতা কম, স্থূলতা বেশি

>

• পুষ্টিহীন কিশোরীরা লেখাপড়ায় খারাপ করে
• পুষ্টিহীনতার প্রভাব কর্মজীবনেও পড়ে
• পুষ্টিহীন কিশোরী বিয়ের পর অপুষ্ট শিশু জন্ম দেয়
• পরিস্থিতির উন্নয়নে ৬ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রস্তাব

দেশের সাড়ে তিন কোটি কিশোর–কিশোরীর বড় অংশই পুষ্টির সমস্যায় ভুগছে। কিশোরীদের (১৫-১৯ বছর) এক–চতুর্থাংশের উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম। আবার তাদের মধ্যে স্থূলতার প্রবণতা বেশি। এই তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ এবং ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুষ্টিহীন কিশোরীরা লেখাপড়ায় খারাপ করে। এর প্রভাব কর্মজীবনেও পড়ে। পুষ্টিহীন কিশোরী বিয়ের পর অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেয়। এটি একটি দুষ্টচক্র।

সরকারের খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি জরিপ (২০১২ থেকে ২০১৪ সাল) বিশ্লেষণ করে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী চারজন কিশোরীর মধ্যে একজনের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয় কম।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের অসংক্রামক ব্যাধি ও পুষ্টি কেন্দ্রের পরিচালক মলয় কান্তি মৃধা বলেন, কিশোরীদের পুষ্টি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেছেন, ১১ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে কিশোরীদের প্রয়োজনীয় শারীরিক বৃদ্ধি ঘটছে না। ১৫ বছরের কম বয়সী কিশোরীদের বড় একটি অংশের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম। আবার ১৫-১৯ বয়সীদের মধ্যে একটি অংশে স্থূলতা বেশি।

কিশোরীদের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য ছয়টি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাকের গবেষকেরা। ছয়টি বিষয় হচ্ছে কৃমি নিধন, খাদ্যবৈচিত্র্য নিয়ে বিদ্যালয়ভিত্তিক শিক্ষা, একাধিক অণু পুষ্টিকণাসমৃদ্ধ সম্পূরক (যেমন ভিটামিন, জিংক, লৌহ), ফলিক অ্যাসিড, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও স্কুলে সমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ।

কৈশোর পুষ্টি নিয়ে বিশ্বব্যাংক গতকাল সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গেইন, ব্র্যাক জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ ও স্বর্ণকিশোরী ফাউন্ডেশন যৌথভাবে নীতিনির্ধারণী গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কম খরচে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের ব্যাপারে ব্যক্তিকে সচেতন হতে হবে। সন্তান দুধ খেতে না চাইলে পায়েস খাওয়াতে হবে। শরীরচর্চা বা খেলার জায়গা না থাকলে অন্তত দড়ি লাফে অভ্যস্ত হতে হবে।

কিশোর-কিশোরী অপুষ্টি দূর করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কাজ এবং কাজের মানে ঘাটতি আছে বলে মন্তব্য করেন বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পুষ্টি বিশেষজ্ঞ জিয়াউদ্দীন হায়দার।

অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব শামসুল আলম বলেন, পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি করতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা দরকার। তিনি বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে। তাতে পুষ্টি, কিশোর-কিশোরী পুষ্টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

পুষ্টি ক্ষেত্রে এক ডলার বিনিয়োগ করলে ৩ থেকে ৬১ ডলার পর্যন্ত মুনাফা সম্ভব বলে অনুষ্ঠানে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌসি নাহার।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা বলেন, অপুষ্ট, স্বাস্থ্যহীন ও আনন্দহীন কিশোরীদের প্রতি সমাজও রূঢ় আচরণ করে।

অনুষ্ঠানে বেশ কিছু কিশোর ও কিশোরী অংশ নেয়। তাদের একজন কিশোর জাহিদ হাসান। সে বলে, স্কুল পুষ্টিমেলা করলে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি সচেতনতা বাড়বে।