'হোদা গাতা আর গাতা'

সংস্কারের অভাবে ভৈরব পৌর শহরের পাওয়ার হাউস ও ভৈরবপুর উত্তরপাড়া কাঁচাবাজার সড়ক দুটি এখন প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ছবি: সুমন মোল্লা
সংস্কারের অভাবে ভৈরব পৌর শহরের পাওয়ার হাউস ও ভৈরবপুর উত্তরপাড়া কাঁচাবাজার সড়ক দুটি এখন প্রায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ছবি: সুমন মোল্লা

বয়সে তরুণ সবুজ মিয়া কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর এলাকার বাসিন্দা। শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান ছয় বছর ধরে। গতকাল সোমবার দুপুরে যাত্রী নিয়ে বাজারের দিকে যাওয়ার পথে পাওয়ার হাউস সড়কে তাঁর রিকশাটি উল্টে যায়। এতে তিনিসহ আহত হন দুই যাত্রী।

সবুজের ভাষায়, ‘রাস্তাডা (সড়ক) আর রাস্তা নাই। হোদা গাতা আর গাতা। এক চাক্কা থাহে ঢালাইয়ের উপরে, আরেক চাক্কা গাতায়। গাড়ি লইয়া আগানোর জু নাই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের সড়কগুলোর মধ্যে পাওয়ার হাউস ও ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার কাঁচাবাজার সড়কটি এখন বেহাল। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় সড়ক দুটি দিয়ে এখন যান চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে।

ভৈরব মর্যাদায় প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। বর্তমান মেয়র ফখরুল আলম এর আগে আরও দুই দফা মেয়র ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে পৌর শহরের সড়ক প্রশস্তকরণ ও সংস্কারকাজ শুরু হয়। অন্যান্য সড়কের উন্নয়ন হলেও এই দুটি সড়কে প্রত্যাশিত সংস্কার হয়নি।

পৌর পরিষদ সূত্র জানায়, সড়ক দুটি বাংলাদেশ রেলওয়ের। দৈর্ঘ্যে এক কিলোমিটার। পৌর শহরের চণ্ডীবের, কালিপুর, রামশংকপুর এবং উপজেলার আগানগর, শিমুলকান্দি ও শ্রীনগর ইউনিয়নের মানুষ মূল শহরের বাজারে যেতে পাওয়ার হাউস সড়কটি ব্যবহার করেন। আর কাঁচাবাজার সড়ক ব্যবহার করেন পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার মানুষ। রেলওয়ের সড়ক হলেও এক যুগের মধ্যে রেলওয়ে সংস্কার উদ্যোগ নেয়নি। ফলে ধীরে ধীরে সড়ক দুটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
সড়ক রেলওয়ের হলেও এর জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হয় পৌর নাগরিকদের। এই কারণে পৌর কর্তৃপক্ষ সড়ক দুটির স্বত্ব দাবি করছে। কিন্তু স্বত্ব ছাড়তে রাজি হয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আবার স্বত্ব ছাড়া পৌর কর্তৃপক্ষ সংস্কারকাজও করতে চায় না। দুই পক্ষের এমন টানাপোড়েনের কারণে দিন দিন নাগরিক ভোগান্তি বেড়েই চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, তিন বছর আগে সড়কের এমন বেহাল অবস্থায় নাগরিক ভোগান্তির কথা ভেবে স্বত্ব পাওয়া ছাড়াই পৌর কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে সংস্কারকাজ করে সড়ক দুটি চলাচল উপযোগী করে তোলে। তিন বছরের ব্যবধানে এখন আবার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়ক দুটি। তবে তা সংস্কারে পৌর কর্তৃপক্ষও এখন আর উৎসাহী নয়।

গতকাল সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, পিচ ও ইট সরে গিয়ে স্থানে স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়ে আছে। বেশির ভাগ জায়গা থেকে পিচের ঢালাই সরে গেছে। গর্তগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে আছে।

স্থানীয় লোকজন জানালেন, প্রায় প্রতিদিন বিশেষ করে পাওয়ার হাউস সড়কে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে।

সড়ক দুটি পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুল্লাহ নিয়াজ।

হাবিবুল্লাহ জানান, ‘সড়ক দুটি নিয়ে এখন আমরা আছি বিপদে। না পারছি সমস্যা দূর করতে, আবার না পারছি মানুষের দুর্ভোগ সহ্য করতে।’ তিনি জানালেন, সমস্যা সমাধানে প্রধান বাধা রেলওয়ে। তারা সড়কটি নিয়ে কিছু ভাবে না, আবার কেউ ভাবতে এলে ছাড়ও দেয় না।’

পৌর মেয়র ফখরুল আলমও একই মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে ভৈরব বাজার ঘাটের উপসহকারী প্রকৌশলী আহসান হাবিব নিজেই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমাকে প্রতিদিন অন্তত চারবার সড়ক দুটি ব্যবহার করতে হয়। স্বীকার করতেই হবে এই সড়ক আর ব্যবহারের উপযোগী নেই।’ তবে পৌর কর্তৃপক্ষ সংস্কার করতে চেয়েছে আর রেলওয়ে বাধা দিয়েছে, এমন নজির রয়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। রেলওয়ে সংস্কার করছে না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি নীরব ছিলেন।