কঙ্কাল নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ছাত্রলীগে

সংঘর্ষ
সংঘর্ষ

কঙ্কাল বিক্রির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারিতে রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) আজ মঙ্গলবার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আহত অবস্থায় ছাত্রলীগের ১১ নেতা-কর্মীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ছাত্রদের আজ রাত আটটার মধ্যে এবং ছাত্রীদের কাল বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রাবাস খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় ছাত্রলীগের আইএইচটি শাখার সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামান বাদী হয়ে নগরের রাজপাড়া থানায় সভাপতিসহ আটজনকে আসামি করে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ছাড়া আহত শিক্ষার্থী নাফিউল ইসলামের মা শরীফা বানু বাদী হয়ে একই ঘটনায় অপর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এদিকে আইএইচটি কর্তৃপক্ষ বিকেলে প্রতিষ্ঠানে একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘আইএইচটিটির একাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গুরুতর আহত অবস্থায় ১১ জন শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরবর্তী অবস্থা আরও অবনতি এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কায় ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস বন্ধ ঘোষণা করা হলো। সেই সঙ্গে ডিপ্লোমা কোর্স জানুয়ারি-২০১৯–এর অবশিষ্ট মৌখিক পরীক্ষাসমূহ এবং বিএসসিসহ ডিপ্লোমা কোর্সের সকল বর্ষের ক্লাসসমূহ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।’

ছাত্রলীগের আহত কর্মীদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এঁদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের পাঁচজন ও সভাপতির পক্ষের একজন। সাধারণ সম্পাদকের পক্ষের পাঁচজন হচ্ছেন ছাত্রলীগ কর্মী ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিউল ইসলাম, ডেন্টাল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আসমাউল হোসেন, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাফি সরকার, একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও আল আমীন ও ফিজিও থেরাপি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জ্যোতি সিদ্দিক। এঁদের মধ্যে নাফিউল ইসলাম ও আসমাউল হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আসমাউলের মাথায় ২৪টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। এঁরা সবাই ছাত্রলীগের আইএইচটি শাখার সাধারণ সম্পাদকের সমর্থক।

সভাপতির পক্ষের আহত হয়েছেন ছাত্রলীগ কর্মী ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা।

শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তৃতীয় বর্ষের তিনজন শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানের দুই নম্বর গ্যালারিতে কঙ্কাল বিক্রি জন্য প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। এই তিনজন শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের আইএইচটি শাখার সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামানের অনুসারী। সেখানে সভাপতির অনুসারী প্রথম বর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলামের সঙ্গে ওই তিন শিক্ষার্থীর কথা–কাটাকাটি হয়। তিন শিক্ষার্থী বেরিয়ে চলে আসেন। তাঁরা সভাপতির কাছে মীমাংসার জন্য যান। সেখানেই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

সাধারণ সম্পাদক ওহিদুজ্জামান অভিযোগ করেন, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। পরে শুনেছেন, সভাপতির সমর্থকেরা তাঁর উপস্থিতিতেই শামীম ছাত্রাবাসে ঢুকে তাঁর (সাধারণ সম্পাদকের) নিজের এবং সমর্থকদের তিনটি কক্ষ ও মসজিদের জানালার কাচ ভাঙচুর করেন। সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, সভাপতির অনুসারীরা তাঁর কক্ষের টেবিলের ড্রয়ার ভেঙে নগদ টাকা ও ৩১০ নম্বর কক্ষ থেকে ল্যাপটপ লুট করে নিয়ে যান। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

আজ সন্ধ্যায় আইএইচটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুলিশ পাহারায় রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাস ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। একজন শিক্ষার্থীকে দেখা যায়, জিনিসপত্র দুই বস্তায় ভরে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি নওগাঁর পোরশা উপজেলায়। কর্তৃপক্ষ রাত আটটার মধ্যে ছাত্রাবাস ত্যাগ করতে বলেছে। বাধ্য হয়ে এই রাতেই বের হয়েছেন। শামীম ছাত্রাবাসের ৩২০ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, কক্ষটি তছনছ করা হয়েছে। সব মালামাল এলোমেলো হয়ে পড়ে রয়েছে। মোস্তাক আহাম্মেদ নামের একজন শিক্ষার্থী সেখান থেকে নিজের জিনিসপত্র কুড়িয়ে নিচ্ছেন। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জে। তিনি বলেন, তাঁর জিনিসপত্র তছনছ করা হয়েছে। কিছুই গোছাতে পারেননি। রাতে এখন কীভাবে, কোথায় যাবেন ঠিক করতে পারছেন না।

সাংবাদিক দেখে ছাত্রলীগের আইএইচটি শাখার সভাপতি আসলাম সরকার বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের কর্মী–সমর্থকেরাই আহত হয়েছেন। তবে যাঁদের কক্ষ ভাঙচুর করার অভিযোগ করা হচ্ছে, তাঁরা নিজেরাই তাঁদের কক্ষ ভাঙচুর করে সাংবাদিকদের খবর দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য আইএইচটির অধ্যক্ষ ফারহানা হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। সেখান থেকে লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় দুটি অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্তপূর্বক এ ব্যাপারে মামলা নেওয়া হবে।

এর আগে ছাত্রলীগের মারামারির কারণে ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর একইভাবে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। সে সময় ছাত্রলীগের ওই কমিটি বাতিল করা হয়েছিল এবং ছাত্রলীগের চার নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে নতুন কমিটি গঠন করা হয়।