ছেলের মুক্তিপণের টাকা নিয়ে সারা রাত বসে ছিলেন বাবা

রাজধানীর ডেমরায় নুর-ই মদিনা মাদ্রাসার ছাত্র শিশু মো. মনির হোসেনকে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে মুক্তিপণের টাকা পাওয়ার আগেই মনিরকে হত্যা করা হয়। ছেলেকে ফিরে পেতে মুক্তিপণের কিছু টাকাও জোগাড় করে নিয়ে গিয়েছিলেন শিশুটির বাবা। নির্ধারিত জায়গায় টাকা নিয়ে সারা রাত বসে ছিলেন বাবা। 

এ হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল জলিল হাদীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডেমরা থানা-পুলিশ।

গ্রেপ্তার করা অপর দুজন হলেন মো. আকরাম ও আহাম্মদ সফি ওরফে তোহা। এ সময় তাঁদের হেফাজত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি পাতলা তোয়ালে, দুইটি সিমেন্টের বস্তা, দুইটি কালো রঙের দড়ি, সিমসহ একটি মোবাইল সেট, মৃতদেহের পড়নে থাকা গ্যাবাডিংয়ের ফুলপ্যান্ট ও পাঞ্জাবি উদ্ধার করা হয়।

আজ বুধবার মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এ তথ্য জানান পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ফরিদউদ্দিন। তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আবদুল জলিল হাদী ও আহাম্মদ সফি ওরফে তোহাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার তাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বংশালের মালিটোলা এলাকা থেকে মো.আকরামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ডেমরা থানা সূত্রে জানা যায়, ডেমরার ডগাইর নতুন পাড়ার সাইদুল হকের দুই মেয়ে ফাতেমা আক্তার (১২), মুন্নি আক্তার (৯) ও ছেলে মো. মনির হোসেন (৮) ডগাইর নতুনপাড়ার নুর-ই মদিনা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করত। প্রতিদিনের মতো গত রোববার (৭ এপ্রিল) তারা তিনজন সকাল সাতটায় মাদ্রাসায় যায়। বেলা ১১ টার দিকে মেয়ে মুন্নি বাসায় এসে বাবাকে জানায়, মনিরকে মাদ্রাসায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন সাইদুল হক তাঁর স্ত্রীসহ মেয়েদের নিয়ে মাদ্রাসায় এবং মাদ্রাসার আশপাশে সম্ভাব্য সব জায়গায় ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করেও পাননি। ছেলের নিখোঁজের তথ্য জানিয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। পরে ওই দিন ডেমরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি।

ঘটনার দিন রাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বাবা সাইদুল হকের মোবাইলে ফোনে কল করে মনিরের মুক্তির বিনিময়ে পণ হিসেবে তিন লাখ টাকা চায়। মুক্তিপণের টাকা ডেমরা থানার মসজিদুল-ই-আয়েশা জামে মসজিদের ভেতরে জানাজার খাটিয়ার নিচে রেখে আসার কথা বলে। টাকা না দিলে ছেলের লাশ পাবেন বলে হুমকি দেন ওই ব্যক্তি। বিষয়টি পুলিশকে জানালে, ডেমরা জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ডেমরা থানা-পুলিশ সম্ভাব্য সকল জায়গায় ছেলেকে উদ্ধারের জন্য অভিযান চালায়। উদ্ধার অভিযানের একপর্যায়ে ঘটনার পর দিন সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকেল পাঁচটার দিকে মসজিদুল-ই-আয়েশা জামে মসজিদের দ্বিতীয় তলা থেকে তৃতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ির চৌকিতে সিমেন্টের বস্তার ভেতরে রশি দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় শিশু মনিরের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ডেমরা থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। এ হত্যার ঘটনায় জড়িত উল্লেখ করে তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, অধ্যক্ষ আবদুল জলিল হাদী (৪২) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এবং মসজিদের ইমাম। দুই ছাত্রকে নিয়ে মনিরকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন তিনি। ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে মাদ্রাসা ছুটির পর মনিরকে অপহরণ করা হয়। নির্মাণাধীন মসজিদে নেওয়ার সময় মনির কান্নাকাটি শুরু করলে একজন শিশুটির মুখ চেপে ধরেন। তখন মনির চিৎকার করলে হাদী শিশুটির চোখ ও মুখ গামছা দিয়ে বাঁধেন। তখনই মনির মারা যায়। এ সময় মনিরের লাশ বস্তায় ভরে মসজিদের সিঁড়িতে পাশে রেখে দেন তাঁরা। পরে মনিরের বাবা সাইদুল হকের কাছে মুক্তিপণের তিন লাখ টাকা দাবি করেন অপহরণকারী তোহা। টাকা মসজিদের লাশ রাখার খাটিয়ার ওপর রেখে যেতে বলে। সাইদুল হক এক লাখ টাকা জোগাড় করে আসেন মসজিদের কাছে। সারা রাত অপেক্ষা করে টাকা হাদীর কাছে রেখে চলে যান বাবা। পরদিন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।