দুদকের অভিযানে চারজন আটক

>

বগুড়ার বিআরটিএ কার্যালয়ে দুদকের অভিযানে আটক চারজন। গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে।  ছবি: প্রথম আলো
বগুড়ার বিআরটিএ কার্যালয়ে দুদকের অভিযানে আটক চারজন। গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। ছবি: প্রথম আলো

ঘুষের টাকা আদায়। পরে চার দালালের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ এক মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বগুড়া কার্যালয়ের দোতলায় বসেন সহকারী পরিচালক। তাঁর পাশের কক্ষে চেয়ার-টেবিল পেতে বসেন একরামুল হক ওরফে ডাবলু নামের এক ব্যক্তি। তিনি এই কার্যালয়ের কর্মচারী নন। তবে প্রতিদিন সহকারী পরিচালকের নামে তিনিই ঘুষের টাকা আদায় করেন। তা খাতায় লিখে রাখেন।

বিআরটিএ কার্যালয়ে ঘুষের টাকা আদায়ের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার ১০৬ হটলাইনে ফোন করে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেন একজন ভুক্তভোগী। দুদকের বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম ছদ্মবেশে বিআরটিএর কার্যালয়ে যান। তিনি ট্রাকের কাগজপত্র নবায়ন করার কথা জানালে বিআরটিএর সহকারী পরিচালকের নামে ঘুষ দাবি করেন একজন দালাল। পরে দালালদের ধরতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুদক বগুড়া জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে তিনজন সহকারী পরিচালকসহ দুদকের একটি দল বিআরটিএ কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে। সহকারী পরিচালকের নামে ঘুষের টাকা আদায় করার সময় একরামুল হককে হাতেনাতে আটক করা হয়। তা ছাড়া আরও তিনজনকে আটক করে দুদকের দলটি। তাঁরা হলেন মালতিনগর এলাকার আবদুল মজিদ, ফুলবাড়ি এলাকার মাহমুদার রহমান ও বেলাল হোসেন। ঘুষের টাকা আদায়কারী ‘ক্যাশিয়ার’ একরামুল হক শহরের ধরমপুর এলাকার বাসিন্দা। পরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম মৌলি মণ্ডল ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে টাউট আইনের ১৮৭৯–এর ৩৬ (৬) ধারায় চারজনের বিরুদ্ধে এক মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

দুদকের এই অভিযানে বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক মনিরুজ্জামান ছাড়াও সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ চাকি, আল আমিনসহ অন্যরা অংশ নেন।

একরামুল বিআরটিএ কার্যালয়ের কর্মচারী নন। অথচ প্রায় আট বছর ধরে চেয়ার-টেবিল পেতে ‘ঘুষ’ আদায় করে আসছিলেন। সহকারী পরিচালকের পক্ষে ঘুষের টাকা তোলার জন্য এই কার্যালয়ে একরামুল ছাড়াও আরও অন্তত পাঁচজন রয়েছেন। তাঁরা প্রতিদিন সকাল থেকে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে এই কার্যালয়ে নানা কাজে আসা লোকজনের কাছ থেকে ঘুষের টাকা তোলেন। খাতাপত্রে হিসাব রাখেন। সপ্তাহ শেষে সহকারী পরিচালকের কাছে হিসাব বুঝিয়ে দেন। এর মধ্যে দুদকের অভিযানের সময় বিআরটিএ কার্যালয়ের একটি কক্ষ থেকে একরামুলকে আটক করা হয়। অন্য তিনজনকে কার্যালয়ে বাইরে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের সময় হাতেনাতে আটক করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, ফিটনেস, কম্পিউটার, লাইসেন্স ও ড্রাইভিং শাখায় ঘুষের টাকা তোলার জন্য চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসেন দালাল শফিকুল ইসলাম, রিপন, শফিকুল ইসলাম (২), আবদুর রাজ্জাক ও আল আমিন। রিপনের বাড়ি বরিশালে। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে এখানে কম্পিউটার শাখায় বসে মালিকানা পরিবর্তনের কাজে আসা লোকজনের কাছ থেকে গাড়িপ্রতি তিন হাজার টাকা হারে ঘুষ আদায় করছেন। এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাজে আসা লোকজনের কাছ থেকে ঘুষের টাকা আদায় করছেন আবদুর রাজ্জাক ও আল আমিন নামের দুই ব্যক্তি।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীকে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। জনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা ঘুষ না দিলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়া হয়। রাজ্জাক ও শফিকুলের হাতে এই টাকা দিতে হয়। ছবি তোলার সময় জাকির নামে একজনকে এবং লাইসেন্স নেওয়ার সময় ইজামুল নামের একজনকে ঘুষ দিতে হয়।

দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, অভিযানের সময় বিআরটিএর সহকারী পরিচালক অনুপস্থিত ছিলেন। অভিযানের খবর পেয়ে অন্য দালালেরা সটকে পড়েন। বিআরটিএ কার্যালয়কে দালালমুক্ত করতে দুদকের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জানতে চাইলে বিআরটিএর বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, তাঁর কার্যালয়ের ভেতরে-বাইরে কোনো দালাল নেই। কারও কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের জন্য তিনি কাউকে অফিসে চেয়ার-টেবিল পেতে বসতেও দেননি। তাঁর দাবি, যাঁদের দালাল বলা হচ্ছে, তাঁরা পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন আর শোরুমের প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে এই কার্যালয়ে রয়েছেন। তাঁরা বিআরটিএ কার্যালয়ে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। তাঁদের সম্পর্কে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ও অবগত আছে।