কৃষিজমিতে অবাধে পুকুর খনন

বড়াইগ্রামে একদিকে চলছে জমি থেকে ধান কাটা। আরেক দিকে চলছে ইটভাটার জন্য ধানখেত ধ্বংস করে পুকুর কাটা। সম্প্রতি গুড়-মশৈল এলাকায়।  প্রথম আলো
বড়াইগ্রামে একদিকে চলছে জমি থেকে ধান কাটা। আরেক দিকে চলছে ইটভাটার জন্য ধানখেত ধ্বংস করে পুকুর কাটা। সম্প্রতি গুড়-মশৈল এলাকায়। প্রথম আলো

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নাটোরে কৃষিজমিতে চলছে অবাধে পুকুর খনন। পুকুর খননে কৃষির ধ্বংসযজ্ঞ চললেও প্রশাসন যেন কিছুই দেখছে না। নামমাত্র কিছু অভিযান চালালেও প্রভাবশালীরা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাঁও ইউনিয়নের গুড়–মশৈল এলাকার রাস্তাসংলগ্ন বিস্তীর্ণ ধানখেতের এক পাশ থেকে তিনটি এক্সকাভেটর লাগিয়ে চলছে পুকুর খনন। এই জমির মালিক স্থানীয় বনলতা অটোব্রিক্সের মালিক সামসুল মল্লিক। এখানে তাঁর নিজস্ব ছয় বিঘা ও বার্ষিক কৃষকের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া প্রায় ছয় একর জমি আছে। এ জমির সবুজ ধান কেটে অবৈধভাবে অবাধে তিনি পুকুর খনন করাচ্ছেন।

এর পাশাপাশি জোয়াড়ী ইউনিয়নের জোয়াড়ী মাঠেও অনেকেই খনন করছেন পুকুর। বড়াইগ্রাম উপজেলার কেল্লা মাঠে, আহমেদপুরে, কামারদহ, রাজাপুর, বড়াইগ্রামে, মহানন্দগাছাসহ পাশের গুরুদাসপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে পুকুর খনন। এদিকে লালপুর উপজেলার কদমচিলান, সেকচিলান, পানঘাটা এলাকায় অবাধে কাটা হচ্ছে পুকুর। পুকুরপাড় চিলান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষিজমিতে পুকুর খনন করছেন স্থানীয় এক কৃষক। পুকুরপাড় চিলান গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে ইয়াকুব আলী প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে পুকুর খনন করছেন। এই পুকুরের মাটি তিনি বিক্রি করছেন বড়াইগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায়।

ইয়াকুব আলীর জমি থেকে মাটি নিতে আসা ট্রাক্টরমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি গাড়ি মাটি বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে আট শ টাকায়।

ওই এলাকার অন্তত ১০ জন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অনেকেই এখন ভিটেমাটিতে করা আম, লিচু, কাঁঠাল, বাগান কেটে সাময়িক লাভের আশায় পুকুর খনন করছেন। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের লোকজন দু-একটা অভিযান চালান। তাতে কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না কৃষিজমির এই ধ্বংসযজ্ঞ।

পুকুর খননে উদ্বিগ্ন নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস। তিনি জানান, কোনো অবস্থাতেই কৃষিজমি, ফসলি জমি কেটে পুকুর বানানো যাবে না। রাস্তার ওপর দিয়ে কোনো মাটি বহনকারী ট্রাক্টর বা ড্রাম ট্রাক চলতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শায়েস্তা করতে হবে। তিনি জানান, পুকুর খনন বন্ধ করার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে।

বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কৃষিজমিতে পুকুর খনন করতে দেখে পুকুরের মালিকসহ গাড়ির চালককে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও জরিমানা করেছি। গাড়ির ব্যাটারি জব্দ করেছি।’

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, একদিকে পুকুর খনন যেমন আইনবিরোধী তেমনি ফসল নষ্ট করে পুকুর খনন করায় প্রকৃতিরও গুরুতর ক্ষতি করে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ জানান, পুকুর খনন বন্ধে তাঁরা জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আর্থিক জরিমানার সঙ্গে কারাদণ্ডও দিচ্ছেন তাঁরা।