উড়ে গেছে চালা, খোলা আকাশের নিচে শিশুরা

ঝড়ে বিধ্বস্ত রাবেয়া-বাটুল বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান। গত সোমবার দুপুরে।  প্রথম আলো
ঝড়ে বিধ্বস্ত রাবেয়া-বাটুল বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান। গত সোমবার দুপুরে। প্রথম আলো

কালবৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেছে বিদ্যালয়ের টিনের চালা। দুমড়েমুচড়ে গেছে টিনের বেড়াটিও। এটা ২ এপ্রিলের কথা। কিন্তু এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আর্থিক সংকটে পুনর্নির্মাণ করা হয়নি বিদ্যালয়টি। তাই এখনো খোলা আকাশের নিচে বসে পড়ালেখা করতে হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার খামারনাচকৈড়-খোয়ারপাড়া এলাকার রাবেয়া-বাটুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

গত সোমবার সকালে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পাঠদানকক্ষে পাতা বেঞ্চগুলোতে শিক্ষার্থীরা বসে লেখাপড়া করছে। দুমড়েমুচড়ে যাওয়া টিনের বেড়াগুলো দিয়ে পাঠদানের জায়গাটি আড়াল করা হলেও শিশুদের মাথার ওপর কোনো চালা নেই। তীব্র রোদের তাপ সহ্য করেই পাঠ গ্রহণ করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক দোমড়ানো টিনের বেড়ায় ঠেস দিয়ে রাখা বোর্ডে পাঠদানের বিষয় লিখছেন।

দুজন শিক্ষক জানান, জবতুল্লাহ মিয়ার প্রচেষ্টায় ২০০৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে চারজন শিক্ষকের অনুদানে টিনের বেড়ার ওপর ছাপরা তুলে চারটি কক্ষে পাঠদান শুরু করেছিলেন তাঁরা। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি হলেও অবকাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। দুর্বল ও ভঙ্গুর অবকাঠামোতেই চলছিল পাঠদান। বিদ্যালয়টিতে ১৬৩ শিক্ষার্থীর জন্য চারজন শিক্ষক আছেন।

কিন্তু ২ এপ্রিলের কালবৈশাখী ঝড়ে চাল উড়ে যাওয়াসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো ভেঙে পড়ায় খোলা আকাশের নিচেই শিশুদের পাঠদান করা হচ্ছে। তবে এখন যখন–তখন আবহাওয়ার পরিবর্তনে আকাশে মেঘ হলেই বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া ঝড়-বৃষ্টি থাকলে অভিভাবকেরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম থাকছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, ঝড়ে তাদের বিদ্যালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তিন দিন পাঠদান বন্ধ ছিল। খোলার পর অনেক কষ্ট করে ক্লাস করতে হচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক কাজগুলো আশপাশের বাড়িতে গিয়ে সারতে হচ্ছে।

প্রধান শিক্ষক প্রহ্লাদ চৌধুরী বলেন, বিদ্যালয়টি মেরামত না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পরিচালনা কমিটির সভাপতির মৃত্যু। কয়েক মাস আগে বিদ্যালয়টির উদ্যোক্তা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি জবতুল্লাহ মিয়া মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। তারপরও উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিদ্যালয়টির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি অবগত নন।