রাসেল পেলেন ৫ লাখ টাকা, বাকিটা এক মাসে

উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে রাসেল সরকার। সঙ্গে তাঁর পরিবার। ছবি: সাইফুল ইসলাম
উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে রাসেল সরকার। সঙ্গে তাঁর পরিবার। ছবি: সাইফুল ইসলাম

বাসের চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে আদালতে দুই বিচারকের উপস্থিতিতে ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকার চেক দিয়েছে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার বেলা তিনটায় বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের উপস্থিতিতে এই চেক প্রদান করা হয়।

পরে দুই বিচারক গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষকে বলেন, রাসেলের চিকিৎসায় তো অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ৫০ লাখ টাকা আমরা দিতে বলেছি। এত কম দিয়েছেন কেন?
জবাবে গ্রিন লাইন মালিকের পক্ষের আইনজীবী ওয়াজি উল্লাহ বলেন, ‘আমরা এক মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছি। এর মধ্যে ভাগে ভাগে টাকা দেব।’ তখন আদালত বলেন, ভাগে ভাগে না, একসঙ্গে দিতে হবে।

এরপর এক মাসের মধ্যে বাকি ৪৫ লাখ টাকা রাসেল সরকারকে দেওয়ার আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে রাসেল সরকারের ক্ষতিগ্রস্ত ডান পায়ের চিকিৎসা সাভারের সিআরপিতে করানোর ও বাঁ পায়ে কৃত্রিম পা লাগানোর চিকিৎসা করানোর আদেশ দেন আদালত।

আদালতে গ্রিন লাইন মালিকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ওয়াজি উল্লাহ। রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন শামসুল হক রেজা।

আদালতে আইনজীবী শামসুল হক রেজা গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনে গ্রিন লাইন মালিকের দেওয়া বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল বলে তুলে ধরেন। আদালত সে বিষয়েও গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষকে জবাব দিতে বলেন।

আদালতে বাসের চাপায় পা হারানো রাসেল সরকার ও গ্রিন লাইন পরিবহনের মালিক উপস্থিত ছিলেন।

পরে আদালতের আদেশের বিষয়ে রাসেল সরকার বলেন, ‘আমার চিকিৎসায় অনেক খরচ হয়েছে। ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা, মাত্র ৫ লাখ দিয়েছে। আদালতই ৫০ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালতের বাইরে তো আমি আর কিছু বলতে পারি না। আমি চাই, আদালতের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে বাকি টাকা আমাকে দেওয়া হোক।’

রাসেলের পা হারানোর ঘটনায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনজীবী উম্মে কুলসুমের করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট এক আদেশে দুই সপ্তাহের মধ্যে রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রয়োজন হলে তাঁর পায়ে অস্ত্রোপচার এবং কাটা পড়া বাঁ পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পা লাগানোর খরচ দিতে ওই পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর অগ্রগতি হলফনামা আকারে ৩১ মার্চের মধ্যে আদালতে দাখিল করতেও বলা হয়।

তবে হাইকোর্টের ১২ মার্চের আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিন লাইন পরিবহন আপিল বিভাগ আবেদন করে, যা ৩১ মার্চ খারিজ হয়। ফলে, হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে। এরপর সেদিন হাইকোর্ট ইতিপূর্বে দেওয়া আদেশ ৩ এপ্রিলের মধ্যে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বাস্তবায়ন করতে বলে আদেশের জন্য ৪ এপ্রিল দিন রাখেন।

ধার্য তারিখে গ্রিন লাইন পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক আদালতে হাজির হয়ে জানান, গ্রিন লাইন পরিবহনের মালিক চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন, ৯ এপ্রিল ফিরবেন। এরপর হাইকোর্ট ১০ এপ্রিল আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। শুনানিকালে সেদিন গ্রিন লাইনের আইনজীবী ও মহাব্যবস্থাপকের উদ্দেশে আদালত বলেন, ১০ এপ্রিল আদেশ বাস্তবায়ন বিষয়ে হলফনামা দেবেন। টাকা না দিতে পারলে ১১ তারিখের টিকিট বিক্রি করবেন না। অগ্রিম টিকিট বিক্রি করে জনগণকে দুর্ভোগে ফেলবেন না।