দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে বাঁচানো গেল না

ফেনীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরা‌তের মৃত্যুর খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, ১০ এপ্রিল। ছবি: হাসান রাজা
ফেনীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরা‌তের মৃত্যুর খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, ১০ এপ্রিল। ছবি: হাসান রাজা

ফেনীর সোনাগাজীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি মারা গেছেন। আজ বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন ঢামেক বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসক অধ্যাপক রায়হানা আওয়াল।

নুসরাতকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। তাঁর শরীরের ৭৫ শতাংশ আগুনে পুড়ে যায় বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। নুসরাতের ফুসফুসকে স‌ক্রিয় করতে গতকাল মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে অস্ত্রোপচার করা হ‌য়।

আজ দুপুর পর্যন্ত নুসরা‌তের অবস্থা স্থি‌তিশীল ছিল। রাত সা‌ড়ে আটটার দিকে নুসরা‌তের ভাই মাহমুদুল হাসান প্রথম আলো‌কে জা‌নি‌য়ে‌ছিলেন, তাঁর বো‌নের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে।

নুসরাতের মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর বাবা ও ভাই বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনকে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, ১০ এপ্রিল। ছবি: হাসান রাজা
নুসরাতের মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর বাবা ও ভাই বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনকে জড়িয়ে ধরে আহাজারি করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, ১০ এপ্রিল। ছবি: হাসান রাজা

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন জানান, মৃত্যুর কারণ রক্ত ও ফুসফু‌সের মারাত্মক সংক্রমণ থে‌কে কা‌র্ডিও রেসপিরেটরি ফেইলিয়র (হৃদ্‌যন্ত্রে ক্রিয়া বন্ধ) হয়। এতেই মৃত্যু হয় তাঁর।

গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন মেয়েটির মা। ছাত্রীর স্বজনদের অভিযোগ, মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় অধ্যক্ষের পক্ষের লোকজন ছাত্রীটির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। গত শনিবার গুরুতর আহত অবস্থায় ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।

ফেনীর অগ্নিদগ্ধ নিহত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরা‌তের ভাই মাহমুদুল হাসা‌ন (বাঁয়ে) ও বাবা আবু মুসা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, ১০ এপ্রিল। ছবি: আমিনুল ইসলাম
ফেনীর অগ্নিদগ্ধ নিহত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরা‌তের ভাই মাহমুদুল হাসা‌ন (বাঁয়ে) ও বাবা আবু মুসা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, ১০ এপ্রিল। ছবি: আমিনুল ইসলাম

লাইফ সাপোর্টের যাওয়ার আগে গত রোববার অগ্নিদগ্ধ ওই ছাত্রী চিকিৎসকদের কাছে জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা প‌রি‌হিত চারজন তাঁর গা‌য়ে আগুন ধ‌রি‌য়ে দেন। ওই চারজ‌নের একজনের নাম ছিল শম্পা।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল সোনাগাজীতে সাংবাদিকদের বলেন, শম্পা নামের যে হামলাকারীর কথা অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী বলেছেন, সেই শম্পাকে পুলিশ গতকাল সকালে সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে সোনাগাজী থানার পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার করা নারীর নাম উম্মে সুলতানা ওরফে পপি।

গতকাল মাদ্রাসাছাত্রীটির পরিবার বলেছে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তারা আস্থা রাখতে পারছে না। হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে মেয়েটিকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনাকে পুলিশ ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি মামলার এজাহার নিয়েও পুলিশ কূটচাল চেলেছে।

সোনাগাজীর সেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। ছবি: সংগৃহীত
সোনাগাজীর সেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের এমন অভিযোগের পর আজ সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি উপজেলার মাদ্রাসাছাত্রীকে হত্যাচেষ্টার মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়েছে।

এ দিকে আজ অভিযুক্ত অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সরাফউদ্দিন। ওই মাদ্রাসার প্রভাষক আফসার উদ্দিন ও ছাত্র আরিফের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন একই আদালত।

ফেনীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর খবর শুনে অচেতন হয়ে পড়েন মা শিরিন আক্তার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, ১০ এপ্রিল। ছবি: আসাদুজ্জামান
ফেনীর অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুর খবর শুনে অচেতন হয়ে পড়েন মা শিরিন আক্তার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, ১০ এপ্রিল। ছবি: আসাদুজ্জামান