৭৫০ শিক্ষার্থীর মাত্র দুজন শিক্ষক

রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার ভুবনজয় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে সাত শতাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করছেন মাত্র দুজন শিক্ষক। এর মধ্যে একজন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। দাপ্তরিক কাজে তাঁকে প্রায় সময় বাইরে থাকতে হয়। শিক্ষকসংকট থাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রতিদিন দুটি শ্রেণিতে পাঠদান করছেন। শিক্ষকসংকটের পাশাপাশি বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটও রয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জুরাছড়ি উপজেলায় সদরে ১৯৮৯ সালে ভুবনজয় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। উপজেলার একমাত্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ওই বিদ্যালয়ে ২৫ জন শিক্ষক থাকার কথা। অথচ শিক্ষকের পদই আছে নয়টি। বর্তমানে শান্তিময় চাকমা ও ধর্মানন্দ শ্রামণ এই দুজন শিক্ষককে দিয়ে চলছে বিদ্যালয়। পদ অনুযায়ী শান্তিময় চাকমা শারীরিক শিক্ষা ও ধর্মানন্দ শ্রামণ বৌদ্ধ ধর্মবিষয়ের শিক্ষক। এর মধ্যে শান্তিময় চাকমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। এই কারণে তাঁকে দাপ্তরিক কাজে প্রায় সময় বিদ্যালয়ের বাইরে থাকতে হয়। বিদ্যালয়ে গত জানুয়ারি মাসে মিঠুন দাশ নামে একজন শিক্ষক যোগদান করলেও তিনি এখনো প্রশিক্ষণে রয়েছেন। শিক্ষকসংকটের কারণে ইউএনও মো. মাহফুজুর রহমান প্রতিদিন বিকেলে অফিস শেষে পাঠদান করেন। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি ও ইংরেজি বিষয়ে পড়ান। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ থাকলেও শিক্ষক না থাকায় ওই বিভাগে কোনো শিক্ষার্থী নেই।

শ্রেণিকক্ষ সংকট

ভুবনজয় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে দুটি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতল পাকা ভবনে ছয়টি কক্ষ রয়েছে। এই ভবনে রয়েছে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়, শিক্ষক মিলনায়তন ও কম্পিউটার ল্যাব। এই কক্ষগুলোর বাইরে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে মাত্র দুটি। অপর একতলা ভবনে পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কক্ষ মিলনায়তন ও তিনটি শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অপর একটি কক্ষ ব্যবহৃত হয় সততা স্টোর হিসেবে। এ ছাড়া পাশের একটি পরিত্যক্ত টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়।

বিদ্যালয়ে নেই পর্যাপ্ত লোকবলও। জানা যায়, বিদ্যালয়ে একজন অফিস সহকারী, একজন দপ্তরি, একজন নৈশপ্রহরী ও এমএলএসের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। খণ্ডকালীন একজন কর্মচারী দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক না থাকায় বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না।

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী উমেন্টেই রাখাইন বলে, শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ক্লাসে গাদাগাদি করে বসতে হয় তাদের। শেষ বেঞ্চে বসলে শিক্ষকের কথা বোঝা যায় না। এ ছাড়া বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক না থাকায় প্রায় সময় পাঠদান বন্ধ থাকে।

মো. আবদুল মোতালেব নামের বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক বলেন, বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ে দায়সারা পাঠদান হচ্ছে। অনেক সময় পাঠদান হয় না। এ কারণে প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষায় ফল খারাপ হচ্ছে। সামনের পরীক্ষায়ও ফলাফল খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শান্তিময় চাকমা প্রথম আলোকে বলেন,‘ বর্তমানে বিদ্যালয়ে আমরা দুজন শিক্ষক রয়েছি। এর মধ্যে আমাকে দাপ্তরিক কাজে প্রায় সময় বাইরে থাকতে হয়। শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাচ্ছে না।’

শান্তিময় চাকমা আরও বলেন, শিক্ষকসংকট সামাল দিতে গত কয়েক মাস ধরে ইউএনও নিজে উদ্যোগী হয়ে দুই থেকে তিনটি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন। এ ছাড়া ইউএনওর পরামর্শে কয়েকজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নেওয়া হয়েছে। তাঁদের সহায়তায় জোড়াতালি দিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে।

জুরাছড়ি ইউএনও মো. মাহফুজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভুবনজয় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকসংকট দীর্ঘদিনের। ২৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও বিদ্যালয়ে সৃষ্ট পদ আছে মাত্র নয়টি। এর মধ্যে মাত্র দুইজন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। আইনের জটিলতার কারণে নতুন পদ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। শিক্ষকসংকটের পাশাপাশি অবকাঠামো, শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ কর্মচারীর পদও শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়ের অবস্থা দেখে আমার কার্যালয়ের কাজগুলো দ্রুত শেষ করে প্রতিদিন বিকেলে দুই থেকে তিনটি বিষয়ে ক্লাস নিচ্ছি।’

জেলা প্রশাসক মো. এ কে এম মামুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ভুবনজয় সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কাজ হয়নি।