সিলেটে বিএনপির কর্মীদের তোপের মুখে মোকাব্বির

মোকাব্বির খান
মোকাব্বির খান

সিলেটে একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনের সাংসদ মো. মোকাব্বির খান। কিছু নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে বক্তব্য সংক্ষেপ করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরের বন্দরবাজার এলাকায় সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে।

মোকাব্বির খান গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরামের মনোনয়নে উদীয়মান সূর্য প্রতীক নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। সে নির্বাচনে বিএনপি ছয়টি ও গণফোরাম দুটি আসন পায়। এরপর ঐক্যফ্রন্ট তথা বিএনপির নির্বাচিত ব্যক্তিরা শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ অবস্থায় ২ এপ্রিল মোকাব্বির শপথ নেন। তাঁর শপথ নেওয়ার ঘটনায় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নেওয়ার ঘটনায় মোকাব্বিরকে চরম মাশুল দিতে হবে বলেও তখন স্থানীয় বিএনপির নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দিয়েছিলেন। এ অবস্থায় শপথ নেওয়ার পর মোকাব্বিরের প্রথমবারের মতো সিলেট সফরকালে এ ঘটনা ঘটল।

আজ বেলা পৌনে ১১টায় সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিয়ার উদ্যোগে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সরকারি সেবাসমূহের মানোন্নয়ন শীর্ষক অভিজ্ঞতা বিনিময়’ নামের একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে উপস্থিত হন সাংসদ মোকাব্বির খান। তাঁকে দেখেই তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপি ও মহিলা দলের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা আয়োজকদের কাছে অনুষ্ঠানে সাংসদের উপস্থিতির কারণ জানতে চান। একপর্যায়ে দলটির নেতা-কর্মীরা মিলনায়তন ত্যাগ করে বাইরে বিক্ষোভ করেন।

খবর পেয়ে জেলা পরিষদের সামনে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এসে ভিড় জমাতে থাকেন। এ সময় মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী মারমুখী হয়ে সাংসদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। এ অবস্থায় সাংসদ তড়িঘড়ি করে বক্তব্য দিয়ে দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। তবে সাংসদ চলে যাওয়ার পর আয়োজকদের অনুরোধে পুনরায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তবে এরপর অনুষ্ঠান আর বেশি স্থায়ী হয়নি। দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠান শেষ করে আয়োজকেরা।

অনুষ্ঠানে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শাহানারা বেগম, মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা নিগার সুলতানা ডেইজিসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘অনুষ্ঠান চলাকালে হঠাৎ সাংসদ মোকাব্বির এসে যোগ দেন। এতে তাৎক্ষণিকভাবে দলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হন এবং সাংসদকে এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য আয়োজকদের জানান। কিন্তু সেটা না হওয়ায় আমরা মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে আসি। পরে দলের নেতা-কর্মীরা বাইরে বিক্ষোভ শুরু করলে সাংসদ তড়িঘড়ি বক্তব্য দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। পরে আয়োজকদের অনুরোধে পুনরায় আমরা অনুষ্ঠানে যোগ দিই।’

আয়োজক সংগঠন আইডিয়ার নির্বাহী পরিচালক নজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংসদের উপস্থিতির কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মিলনায়তন ছেড়েছিলেন। সাংসদ চলে যাওয়ার পর তাঁরা আবার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তবে অনুষ্ঠানে কোনো বিক্ষোভ কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।’

এ ঘটনার পর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও সাংসদ মোকাব্বির খান ফোন ধরেননি।