ত্রিশে পড়ছে মঙ্গল শোভাযাত্রা

বর্ষবরণ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে নানা আয়োজন। গতকাল বিকেলে।  ছবি: হাসান রাজা
বর্ষবরণ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে চলছে নানা আয়োজন। গতকাল বিকেলে। ছবি: হাসান রাজা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা এ বছর ৩০ বছরে পা দিচ্ছে। তাই এবার আরও বর্ণাঢ্য পরিসরে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে প্রস্তুতি ব্যাপক হলেও এবারের শোভাযাত্রাটির চলাচলের পরিসর ছোট হবে। চারুকলার সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে ফিরবে শোভাযাত্রার যাত্রীরা। ঐতিহ্য অনুযায়ী এর উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

রাজধানীতে বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুকলা থেকে এই শোভাযাত্রার শুরুটা হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। যদিও তখন এতটা বর্ণাঢ্য ছিল না শোভাযাত্রা। বছর বছর বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ হতে থাকে আয়োজনটি। ২০১৬ সালে চারুকলা অনুষদের এ আয়োজন ইউনেসকোর অপরিমেয় বিশ্ব সংস্কৃতি হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

গত বুধবার চারুকলা অনুষদের ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেল উৎসবমুখর পরিবেশ, তুমুল কর্মব্যস্ততা। জয়নুল গ্যালারির সামনে থরে থরে সাজানো চিত্রিত সরা। দেয়ালে শোভা পাচ্ছে জলরঙের চিত্রকর্ম। ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রাঙ্গণে নবীন শিক্ষার্থীরা কাজে মেতে আছেন।

বিশাল এই কর্মযজ্ঞের একটাই উদ্দেশ্য, বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদ্‌যাপনের তহবিল গঠন। এবার মূল দায়িত্ব পালন করছে চারুকলার ২১তম ব্যাচ। ব্যাচের উদ্যোগের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও জ্যেষ্ঠ শিল্পীরা। কেউ ছবি, কেউ সরাচিত্র এঁকেছেন, কেউ তৈরি করেছেন মুখোশ, পুতুলসহ বিচিত্র ভাস্কর্য।

এসবই বিক্রি হচ্ছে। বড় সরাচিত্র পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায়, ছোট সরাচিত্র ২০০ থেকে ৫০০ টাকায়। বাঘ, প্যাঁচা, টেপাপুতুল ১০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় মিলছে। এ ছাড়া হাতপাখা, মুখোশ, বিভিন্ন শোপিসও বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। শিক্ষার্থীদের আঁকা জলরঙের চিত্রকর্ম পাওয়া যাচ্ছে দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় এবং শিক্ষকদের চিত্রকর্ম পাওয়া যাচ্ছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায়।

শিল্পকর্ম তৈরি এবং বেচাকেনার পাশাপাশি চলছে একটি যাত্রাপালার কাজ। নববর্ষ উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে এবার যাত্রাপালাটি পরিবেশিত হবে চারুকলা ক্যাম্পাসে।

কথা হলো চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমাদের ভাবনা ছিল এবারের থিমে পজিটিভ কিছু সামনে রাখা হবে। এ কারণে “আনন্দধারা বহিছে ভুবনে”এমনটাই প্রাথমিকভাবে চিন্তা করেছিলাম। তবে কিছুদিন আগে কাশ্মীর বা নিউজিল্যান্ডে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনায় আমরা সে ভাবনা থেকে সরে এসেছি। তা ছাড়া বর্তমানে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তারপরও নানা ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সব বিবেচনায় কবিগুরুর “মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে” বাণীকে শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।’

৩০ বছরের সাফল্যের পথে এগিয়ে চলা মঙ্গল শোভাযাত্রার আরেকটি বিশেষ দিক হচ্ছে, এটি আয়োজন করার ক্ষেত্রে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়া হয় না। চারুকলার শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা চিত্রশিল্পীদের অনেকে তাঁদের চিত্রকর্ম বিক্রি করে যে অর্থ পান, তা-ই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের মূল উৎস। এর ফলে শিল্পী-শিক্ষার্থীরা যেমন গর্বিত, তেমনি সাধারণ মানুষও নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারছে।