উৎসবের প্রাণ পাজন

পাহাড়ে বৈসাবি উৎসবে অতিথি আপ্যায়নের জন্য রান্না হয় পাজন। পাজন রান্নার উপকরণ সবজির বাজার তাই জমে উঠেছে। গতকাল সকালে  রাঙামাটি শহরের কল্যাণপুরে।  সুপ্রিয় চাকমা
পাহাড়ে বৈসাবি উৎসবে অতিথি আপ্যায়নের জন্য রান্না হয় পাজন। পাজন রান্নার উপকরণ সবজির বাজার তাই জমে উঠেছে। গতকাল সকালে রাঙামাটি শহরের কল্যাণপুরে। সুপ্রিয় চাকমা

পাহাড়ে বিজু, বৈসুক, সাংগ্রাই, বিষু, বিহু ও চাংক্রান উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ হরেক রকম সবজি দিয়ে রান্না করা খাবার পাজন (পাচন)। উৎসব শুরু হতে মাত্র এক দিন বাকি। এজন্য এখন পাজন রান্নার বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ চলছে। রাঙামাটি শহরের হাটবাজারগুলোতে এখন পাজনের সবজি বিক্রি জমজমাট।

গতকাল বুধবার শহরের তিন স্থানে হাট বসে। হাটে পাজন রান্নার জন্য নানা ধরনের সবজি কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পাহাড়িরা। দূর–দূরান্তের জুম খেত ও বন থেকে নানা ধরনের সবজি সংগ্রহ করে বাজারে আনা হয়। শহরের বনরূপা, তবলছড়ি ও কল্যাণপুর এলাকা হাটে দেখা গেল বিচিত্র চেনা-অচেনা সবজি ও শাক।

বনরূপা বাজারে কথা হয় কুতুকছড়ি থেকে আসা শান্তি দেবী চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, পাহাড়ের বন ও খেত থেকে কয়েক মণ সবজি এনেছেন তিনি। দুপুরের মধ্যে সব বিক্রি হয়ে গেছে।

বৈসাবি উৎসবে পাহাড়ি মারমাদের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাইয়ের জলনৃত্য পরিবেশনা করে খুদে শিল্পীরা। গতকাল সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ির নারানখাইয়া ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে।  নীরব চৌধুরী
বৈসাবি উৎসবে পাহাড়ি মারমাদের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাইয়ের জলনৃত্য পরিবেশনা করে খুদে শিল্পীরা। গতকাল সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ির নারানখাইয়া ক্ষুদ্র নৃ–গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে। নীরব চৌধুরী

সংস্কৃতি গবেষক ও শিক্ষাবিদ মংসানু চৌধুরীর মতে, পাজন রান্না ও খাওয়ার প্রচলন হয়েছে হাজার বছর আগে। পাজন শব্দটি জুম থেকে এসেছে। আগে পাহাড়িরা সবাই জুমিয়া ছিলেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, জুমে যেসব সবজি উৎপাদন হয় সেসবের ঔষধি গুণ রয়েছে। সেজন্য জুমের সব সবজি মিশিয়ে তরকারি রান্না করাকে পাজন বলা হয়। ছোট-বড় সব বয়সের নারী-পুরুষদের বলা হতো পাজন খেলে শারীরিকভাবে সুস্থতা ও রোগব্যাধিমুক্ত থাকা যায়। সেজন্য বছর শেষে নতুন বছরে সুস্থ থাকার জন্য পাজন খাওয়া হয়।

বিজুর দিনে পাহাড়িদের আপ্যায়নের সময় প্রধান পদ পাজন। প্রত্যেক বাড়িতে ১০ থেকে ২৫ প্রকার সবজি মিশ্রিত পাজন রান্না হয়। কমপক্ষে সাতটি বাড়িঘরে পাজন খাওয়া আব্যশক বলে মনে করা হয়। পাজন পাহাড়িদের বেশ জনপ্রিয় এবং বিভিন্ন সময় পাজন রান্না প্রতিযোগিতাও আয়োজন করা হয়।

আগামীকাল শুক্রবার ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হচ্ছে। পরের দিন অতিথি আপ্যায়ন ও খানাপিনা। তৃতীয় দিনে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পূজা অর্চনা করা হবে। সম্প্রদায় ভেদে পাঁচ কিংবা এক সপ্তাহ ধরে চলে উৎসব। ইতিমধ্যে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন গ্রামে। এজন্য চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।