'আমার বুকের ধনকে মেরে ফেলা হয়েছে'

‘আমার বুকের ধনকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। আমার বুকের ধনকে ফিরিয়ে দাও।’ এভাইে বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকার জামিয়া ওমর ফারুক আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় নিহত ছাত্র হাবিবুর রহমান (১১) ওরফে হাসিফের মা মনোয়ারা বেগম।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মধ্য বোয়ালখালী অনাথাশ্রম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছেলের লাশ আসার খবর পেয়ে মা মনোয়ারা বেগম বাড়ির উঠানে এসে আহাজারি করছেন। পাড়া–প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁকে। হাসিফের গ্রামের বাড়ি দীঘিনালায় হলেও তার পরিবার থাকত চট্টগ্রাম নগরের শেরশাহ বাংলা বাজার এলাকায়।

দাদি জাহানারা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার ফুলের মতন নাতি কখনো আত্মহত্যা করতে পারে না। আমার নাতিকে মেরে ফেলা হয়েছে।’

পরিবারের সদস্যরা জানান, ৮ এপ্রিল মাদ্রাসায় হাসিফকে খুব মারধর করা হয়। মারধরের কারণে সে ওই দিনই শেরশাহ বাংলা বাজারের বাসায় চলে আসে। মাকে বলে পড়ার পরও হুজুর তাকে খুব মেরেছেন। সেদিন মা ছেলেকে আদর করে বুঝিয়ে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন।

হাসিফের বাবা আনিসুল হক বলেন, ‘ছেলের সঙ্গে আমার ৮ এপ্রিল মুঠোফোনে কথা হয়েছিল। মাদ্রাসার হাফেজ তারেক আমার ছেলেকে খুব মারধর করেছেন বলে জানিয়েছে সে। আমি তারেক হুজুরের সঙ্গেও কথা বলেছি। ছেলেকে আবার মাদ্রাসায় পাঠানো বড় ভুল ছিল। তাঁরা ১০ এপ্রিল আমার ছেলেকে মেরে ঝুলিয়ে রেখেছেন। এটা পরিকল্পিত হত্যা।’

অনাথাশ্রম এলাকার জাহাঙ্গীর আলম, কামাল হোসেন ও মোর্শেদা বেগম জানান, হাসিফ মেধাবী ছিল। হাসিখুশিতে মেতে থাকত। ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি তার মনোযোগ ছিল বেশি। তাই তাকে বাবা–মা বায়েজিদের ওই মাদ্রাসায় পড়তে দিয়েছিলেন।

মাদ্রাসাছাত্র হাবিবুর রহমানের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালার অনাথাশ্রম এলাকায় সামাজিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।