নূরুল এখন সরকারি চাকরি করেন

গতকাল উপজেলা সদরের ভবানীগঞ্জে ব্যাংক কর্মকর্তা নূরুল ।  ছবি: প্রথম আলো
গতকাল উপজেলা সদরের ভবানীগঞ্জে ব্যাংক কর্মকর্তা নূরুল । ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর বাগমারার শারীরিক প্রতিবন্ধী নূরুল ইসলামকে এখন আর হুইল চেয়ারে বসে চলাফেরা করতে হয় না। তিনি এখন নিজের টাকায় কেনা তিন চাকার গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ান। সরকারি চাকরি করেন। এ মানুষটির ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে ২০০৬ সালের ৭ মে প্রথম আলোর ওই সময়ের সাপ্তাহিক ক্রোড়পত্র ‘আলোকিত উত্তর’–এ ‘প্রতিবন্ধী নূরুলের স্বপ্নগুলো’ শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হয়। ১৩ বছর পর এসে দেখা গেল, অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সেই সময় ব্যক্ত করা ভবিষ্যৎ স্বপ্নের অনেকটাই এর মধ্যে পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন নূরুল।

উপজেলার হামিরকুৎসা ইউনিয়নের দক্ষিণ মাঝগ্রামের আবদুল মজিদের ছেলে নূরুল ইসলাম। জন্মের দুই বছর পর পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে তাঁর দুই পা চলার শক্তি হারায়। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রথমে লাঠিতে ভর করে ও পরে হুইল চেয়ারের সাহায্যে চলাচল করতে থাকেন। হুইল চেয়ারে করেই বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতেন। মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি আর অভাবী বাবার দিকে না তাকিয়ে থেকে নিজেই নিজের উপার্জনের পথ খোঁজেন। একসময় তিনি বাড়িতে মৌচাষ শুরু করেন। এ ছাড়াও সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে ঋণ নিয়ে গাভি পালন করতেন। দুধ ও মধু বিক্রি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। তখন তাঁর স্বপ্ন ছিল, লেখাপড়া করে তিনি সরকারি চাকরি করবেন। হুইল চেয়ারে না, নিজের গাড়িতে চলাচল করবেন। এসব স্বপ্ন নিয়ে প্রথম আলোয় হুইল চেয়ারে বসা নূরুলের একটি ছবিসহ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।

নূরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি আরও জোর দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যান। উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয়ে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতকোত্তর শেষে নিজের স্বপ্ন পূরণে চাকরির পেছনে ছুটতে শুরু করেন। অবশেষে ২০১৮ সালে ‘সরকারি চাকরি’ নামের সোনার হরিণটি ধরা দেয় তাঁর কাছে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) সুপারভাইজার পদে নিয়োগ পান। বর্তমানে তিনি ওই ব্যাংকের উপজেলার শিকদারী শাখায় কর্মরত। তিনি বলেন, চাকরি পাওয়ার প্রথম দিকে হুইল চেয়ারেই কর্মস্থলে আসতে হতো। এতে অনেক সময় লেগে যেত। তবে কয়েক মাসের বেতন জমিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকায় তিন চাকার একটি বাইক কিনে নেন। এখন তাতে চেপেই যাতায়াত করেন তিনি।

গতকাল বুধবার তিনি ওই বাইকে করে দাপ্তরিক কাজে উপজেলা সদর ভবানীগঞ্জে এলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয়। তিনি গাড়ি থামিয়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত ২০০৬ সালের ওই প্রতিবেদনের কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি জানান, সেই ১৩ বছর আগে প্রথম আলোর কাছে প্রকাশ করা স্বপ্নগুলোর অনেকটিই পূরণ হয়েছে তাঁর। এখন তিনি নিজে উপার্জন করেন, পরিবারের সদস্যদের দেখাশোনা করেন। আর হুইল চেয়ারে চলাচল করতে হয় না তাঁর। তবে এখনো তিনি বাড়িতে মৌচাষ করেন।

রাকাব শিকদারী শাখার ব্যবস্থাপক দীপায়ণ গোস্বামী বলেন, নূরুল ইসলাম তাঁর কাজের প্রতি যথেষ্ট দায়িত্ববান। কাজের প্রতি আগ্রহ অনেক সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের চেয়েও বেশি।