উপাচার্যের ছুটির আবেদন প্রত্যাখ্যান শিক্ষার্থীদের

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার জন্য একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কাটা গাছ নিয়ে আসেন। গতকাল সকালে।  ছবি: সাইয়ান
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার জন্য একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কাটা গাছ নিয়ে আসেন। গতকাল সকালে। ছবি: সাইয়ান

পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলনের মধ্যে ১৫ দিনের ছুটি চেয়ে আবেদন করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এতে তাঁদের কর্মসূচি থেকে সরে যাননি। গতকাল বৃহস্পতিবারও দিনব্যাপী বরিশাল-কুয়াকাটা–ভোলা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা।

উপাচার্যের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার গত বুধবার দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ওই ছুটির আবেদন জমা দেন। রেজিস্ট্রার হাসিনুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। উপাচার্য পদে এস এম ইমামুল হকের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৭ মে।

দুপুরে উপাচার্যের মুঠোফোনে কল করা হলে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী মনোয়ার হোসেন সেটি ধরে বলেন, বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছুটি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেটি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও পরে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যাবে।

ছুটি চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর করা আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, উপাচার্যের ব্যক্তিগত কারণে বৃহস্পতিবার (গতকাল) থেকে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি প্রয়োজন। এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এ কে এম মাহবুব হাসান নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত উপাচার্যের রুটিন কাজগুলো পরিচালনা করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

উপাচার্য ছুটি চাইলেও তাঁর পদত্যাগ বা তাঁকে তাঁর মেয়াদের বাকি সময়ের পুরোটা ছুটিতে পাঠানোর দাবিতে গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বরিশাল-কুয়াকাটা–ভোলা মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে এই অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। শুরুতেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি সফিকুল ইসলাম বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্য ১৫ দিনের ছুটির আবেদন করেছেন। আমরা এটা প্রত্যাখ্যান করছি। তিনি পূর্ণ মেয়াদে ছুটিতে যাবেন কিংবা পদত্যাগ করবেন, এ দুটির একটি সিদ্ধান্ত তাঁকে নিতে হবে। অন্যথায় আমরা ক্লাসে ফিরব না।’

অবরোধের কারণে আগের দিনের মতো গতকালও মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে যানবাহনে আটকা পড়ে হাজারো যাত্রী। বিকেল ৫টার পর অবরোধ তুলে নিলে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

অবরোধ চলাকালে কয়েকজন যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরোধ করে দাবি আদায়ের আন্দোলন করা হচ্ছে কোন যুক্তিতে? সাধারণ মানুষের দুর্ভোগকে আন্দোলনের পুঁজি বানানোটা খুবই দুঃখজনক।

গত ২৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে মন্তব্য করলে ২৭ মার্চ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ২৯ মার্চ উপাচার্য তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি দেন। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৬ এপ্রিল রাজনৈতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠক হলেও তা সফল হয়নি।