ফেনীতে হাত-পা বেঁধে দুই শিশুকে নির্যাতন

টাকা জমানোর ব্যাংক চুরির অপরাধে দুই শিশুকে হাত-পা বেঁধে অমানবিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ফেনীর ছাগলনাইয়া পৌরসভার দক্ষিণ মটুয়া কলোনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শিশুদের কাছ থেকে চুরির স্বীকারোক্তি আদায় করতে জামাকাপড় খুলে হাত-পা বেঁধে বেদম মারধর করা হয়। এরপর আঙুলে ঢোকানো হয় সুই। নির্যাতনের পর একটি কক্ষে রাতভর ফেলেও রাখা হয় তাদের। বাবা-মায়ের অভিযোগ পেয়ে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে শিশুদের উদ্ধার করে পুলিশ।

অভিভাবক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতিত দুই শিশুর একজন (১১) বাক্‌প্রতিবন্ধী। অপরজন (১০) স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। উদ্ধারের পর আহত দুই শিশুকে ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দক্ষিণ মটুয়া কলোনির মো. বাবলু (৩৫) এবং তাঁর ভাই জাহিদুল ইসলামকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে।

ওই শিশুদের বাড়িও দক্ষিণ মটুয়া কলোনি এলাকায়। তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ওই দুই শিশু নিখোঁজ ছিল। রাতে বাড়িতে না ফেরায় তাদের অভিভাবকেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে মধ্যরাতের দিকে শিশুদের অভিভাবকেরা জানতে পারেন, মো. বাবুলের বাড়িতে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। অভিভাবকেরা সেখানে গিয়ে মারধরের শিকার হন। এরপর সকালে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আবার ওই বাড়িতে যান। তখনো মো. বাবুল ও তাঁর ভাই জাহিদুল শিশুদের ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। এরপর থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে দুই শিশুকে উদ্ধার করে এবং মো. বাবলু ও জাহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার দুই শিশুর একজনের বাবা জহির উদ্দিন বাদী হয়ে মো. বাবলু ও জাহিদুল ইসলামকে আসামি করে ছাগলনাইয়া থানায় একটি মামলা করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দুই শিশুকে বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান প্রতিবেশী বাবলু ও জাহিদুল। তাঁরা দুজনকে পরনের পোশাক খুলে হাত–পা বেঁধে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করেন। জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য দুই শিশুর আঙুলের মাথায় সুই ফোটানো হয়। শিশুরা বাড়ি না ফেরায় উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েরা বাবলুর বাড়িতে গেলে সেখানে তাঁদের মারধর করেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। গতকাল সকালে স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে শিশুদের উদ্ধার করতে গিয়েও তাঁরা বিফল হন।

ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম মুর্শেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সোনাগাজীর ঘটনা শুরু থেকে সামাল না দেওয়ায় পরে বড় আকার ধারণ করে। এ ঘটনাও পুলিশ গিয়ে উদ্ধার না করলে বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যেতে পারত। উদ্ধার হওয়া দুই শিশুকে পুলিশের হেফাজতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।