ময়মনসিংহে নতুন শহর হচ্ছে না

ময়মনসিংহ বিভাগ গঠনের পর ব্রহ্মপুত্রের চরে ৪ হাজার ৩৩৬ একর এলাকা নিয়ে নতুন বিভাগীয় শহর গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তবে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়সহ ৩২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভাগীয় সদর দপ্তর স্থাপন করা হবে ব্রহ্মপুত্রের চরে। এ জন্য নতুন করে প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে প্রাচীন ময়মনসিংহ শহরের অবস্থান। অপরিকল্পিত এই শহরে নতুন করে বড় অবকাঠামো এবং পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলা অনেকটা অসম্ভব। তাই ব্রহ্মপুত্রের অপর পারের চর এলাকায় নতুন ‘স্বপ্নের ময়মনসিংহ শহর’ গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তা হচ্ছে না জেনে অনেকে হতাশ। তবে বিভাগীয় কার্যালয়গুলো মূল শহরের বাইরে হলে শহরের ওপর চাপ কমবে বলে তাঁরা মনে করছেন।

২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর দেশের অষ্টম বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে ময়মনসিংহ বিভাগ। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের অপর পারে ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় অবস্থিত চারটি মৌজায় ৪ হাজার ৩৬৬ দশমিক ৮৮ একর ভূমিতে একটি আধুনিক, পরিকল্পিত নতুন বিভাগীয় শহর ও বিভাগীয় সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর একটি ভূমি ব্যবহার মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করে। ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট ১৪টি নির্দেশনাসহ ভূমি ব্যবহার মহাপরিকল্পনাটি অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিকল্পনায় ছিল ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর তিনটি নান্দনিক সেতুর মাধ্যমে নতুন শহরটি পুরোনো শহরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। দাপ্তরিক, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, বিনোদন ইত্যাদি আলাদা আলাদা ব্লক থাকবে। ভূমি অধিগ্রহণের প্রশাসনিক অনুমোদনও হয়েছিল। কিন্তু শুরু থেকে চর এলাকার মানুষ ভূমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। তাঁদের আন্দোলনের মুখে কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

গত বছরের ২৭ নভেম্বর ‘বিভাগীয় সদর দপ্তর ও নতুন বিভাগীয় শহর প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের’ জন্য ৭ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তোলা হয়। কিন্তু প্রকল্পটি একনেক অনুমোদন দেয়নি। একনেক বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে ব্রহ্মপুত্র নদের অপর পারে যথাসম্ভব কম জমি অধিগ্রহণ করে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলো নির্মাণের জন্য নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।

ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) নিরঞ্জন দেবনাথ প্রথম আলোকে বলেন, নতুন শহর হবে না। শুধু ৩২টি বিভাগীয় কার্যালয় নদের ওপারে স্থাপন করা হবে। এ জন্য যে পরিমাণ জায়গা প্রয়োজন, তা অধিগ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে ‘সাইট প্ল্যান’ করার জন্য তাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছেন। সাইট প্ল্যান হলে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করা হবে।

নতুন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। বিশেষ করে পুরোনো শহরের বাসিন্দারা এই সিদ্ধান্তে কিছুটা হতাশ। ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন কালাম বলেন, এই সিদ্ধান্ত মন্দের ভালো। পুরোনো শহরটি একেবারে অপরিকল্পিত। নদের অপর পারে এ ধরনের অপরিকল্পিত কিছু তাঁরা করতে দেবেন না। তাঁরা আশা করছেন, সব কটি সদর দপ্তর সেখানে স্থানান্তরিত হলে স্থানীয় জনগণ সুফল পাবেন।

দীর্ঘদিন ধরে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন ব্রহ্মপুত্রের চর এলাকার বাসিন্দারা। বসতভিটা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা নতুন শহরের বিপক্ষে নন। তাঁরা হাজার হাজার মানুষ ও স্থাপনার বাস্তুচ্যুতির বিপক্ষে ছিলেন। সরকারের নতুন সিদ্ধান্তকে তাঁরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন।