উন্নত জাতের ঘাস চাষে ঘুচবে বেকারত্ব

শ্রীপুর উপজেলার লতিফপুর গ্রামের উন্নত জাতের ঘাসের মাঠ। সম্প্রতি তোলা ছবি।  প্রথম আলো
শ্রীপুর উপজেলার লতিফপুর গ্রামের উন্নত জাতের ঘাসের মাঠ। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রথম আলো

গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে উন্নত জাতের ঘাস চাষে ঝুঁকছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার খামারি ও কৃষকেরা। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এই উপজেলায় প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে নেপিয়ার পাক চং-১ জাতের ঘাস চাষ হচ্ছে। আর এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ২৫০ জন কৃষক।

গত রোববার উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন কৃষক তাঁদের জমিতে ধানের পাশাপাশি ঘাস চাষ করেছেন। তাঁদের একজন রিপা আক্তার। তিনি ৫ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ শুরু করেছেন। তাঁর নিজের বড় একটি গরুর খামারের খাদ্যের চাহিদা মিটছে নিজের উৎপাদিত ঘাসে। এ ছাড়া হ‌ুমায়ূন কবির তাঁর ৩ বিঘা জমিতে একই জাতের ঘাস চাষ করেছেন। তিনিও ঘাসগুলো নিজের গরুর খামারে কাজে লাগাচ্ছেন। গ্রামের আরও অনেকেই নিজস্ব জমিতে ঘাস চাষ করছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবদুল জলিল বলেন, ‘শ্রীপুরের অনেক খামারি এখন এই ঘাসের চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ঘাসগুলোর উপকারিতা জেনে তাঁদের দেখে অন্যরাও চাষ করছেন। গরুর খাবারের সার্বিক চাহিদা পূরণে এই ঘাস খুবই উপকারী। আমি মনে করি, শিগগিরই শ্রীপুরে উন্নত জাতের ঘাস চাষে বিপ্লব ঘটবে। এই ঘাস চাষে বেকারত্বও ঘুচবে।’

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ঘাস গরুর স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম খাবার। আর নেপিয়ার পাক চং-১ জাতের ঘাস গরুর খাবারের ছয়টি উপাদানের সুষম চাহিদা পূরণ করে। অন্যান্য দানাদার খাবার গরুকে বেশি খাওয়ালে তাতে সব খাদ্য গুণ পাওয়া যায় না। এ ছাড়া খাদ্য হিসেবে শুধু ঘাস দিলে গরুর পরিপাকব্যবস্থা ভালো থাকে।

সূত্র আরও জানায়, এ জাতের ঘাস রোপণের ৩ মাসের মাথায় কাটার উপযোগী হয়ে যায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে একই গোছা (গোড়া) থেকে চারা গজায়। সে ক্ষেত্রে ৪৫ দিনের মধ্যে কাটার উপযোগী হয়। একটি গোছা থেকে ১২-১৫ কেজি ঘাস হয়। একটি গরুর জন্য প্রতিদিন ১৫-১৬ কেজি ঘাস প্রয়োজন হয়। একবার বুনলে ৪ বছর ধরে অনবরত ঘাস পাওয়া যায়। ফলে খরচ কম হয়। ঘাস রোপণের পদ্ধতি আখের মতোই। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঘাসের একটি প্লট আছে। সেখান থেকে বিনা মূল্যে চারা দেওয়া হয়। নেপিয়ার জাতের ঘাস এই উপজেলায় কয়েকটি স্থানে আগে থেকেই চাষ হতো। তবে উন্নত জাতের নেপিয়ার পাক চং-১ ঘাস এক-দেড় বছর ধরে চাষ হচ্ছে। একজন কৃষক ঘাস উৎপাদন করলে তাঁর নিজের খামার ছাড়াও বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ আছে। স্থানীয় বাজারে এক কেজি ঘাসের দাম ৬-৮ টাকা।

রিপা আক্তার জানান, তাঁর উদ্যোগ দেখে গ্রামের আরও ১৫ জন ঘাস চাষ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, তার ৫ বিঘা জমির মধ্যে বিভিন্ন বয়সী ঘাস আছে। নিজের খামারের গরুর খাবারের জন্য তিনি এই ঘাস চাষ করছেন। তবে গরুর খাবারের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর অতিরিক্ত ঘাস বিক্রি করতে চান তিনি। তিনি স্থানীয় উপজেলা কার্যালয়ের বিভিন্ন সেমিনার থেকে ঘাস খাইয়ে গরু পালনের উপকারিতার কথা শুনে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই চাষ শুরু করেছেন বলে জানান।