দাবি আদায়ে আবারও রাস্তায় নামছেন পাটকলশ্রমিকেরা

যেকোনো মূল্যে নয় দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে চান রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকেরা। বিশেষ করে বকেয়া মজুরি প্রদান ও মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের দাবিতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। এসব দাবি আদায়ে শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আবারও আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রথম ও দ্বিতীয় দফা আন্দোলনের পরও বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। বিজেএমসির চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে কঠোর আন্দোলন ছাড়া দাবি আদায় সম্ভব নয় বলে মনে করছেন পাটকল শ্রমিকনেতারা।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে খুলনা নগরের খালিশপুর বিআইডিসি সড়কে পিপলস জুট মিল গেটে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশ থেকে তৃতীয় দফা আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ ও রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের পক্ষ থেকে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, ১৪ এপ্রিল প্রতিটি মিল গেটে শ্রমিক সভা। এ ছাড়া ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ এপ্রিল পাটকল ধর্মঘট এবং প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা করে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ। ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে শ্রমিক সমাবেশ। ২৭, ২৮ ও ২৯ এপ্রিল আবারও পাটকল ধর্মঘট এবং প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা করে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ। খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলসহ সারা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২২টি পাটকলে একযোগে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।

গতকাল সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের সভাপতি সরদার মোতাহার উদ্দিন, খুলনা-যশোর অঞ্চলের আহ্বায়ক ও খুলনা ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মুরাদ হোসেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের আহ্বায়ক ও সিবিএ সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন প্রমুখ।

খুলনার বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য খাতে ২০১৫ সালে মজুরি কমিশন গঠন এবং বাস্তবায়ন করা হলেও পাটকলশ্রমিকদের জন্য তা করা হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগ বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের কোনো আন্দোলন করতে দেয়নি। শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের বোঝানো হয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে। তবে দীর্ঘদিনেও ওই আলোচনার ফল শ্রমিকেরা দেখতে না পাওয়ায় সাধারণ শ্রমিকদের চাপে এবার পাটকল শ্রমিক লীগ আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে। সে কারণে সংগঠনটির পক্ষ থেকে কয়েক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আর শ্রমিক লীগের আহ্বানে সারা দেশের পাটকলশ্রমিকেরা ওই কর্মসূচি সফল করতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

মুরাদ হোসেন বলেন, ৬ এপ্রিল ঢাকায় বিজেএমসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রমিক লীগ নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দফা বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় বিকেলে আবারও বিজেএমসির চেয়ারম্যানসহ অন্যদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। কিন্তু সেখানেও দাবি মেনে নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা দিতে পারেননি।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের সঙ্গে শ্রমিকদের রুটি-রুজি জড়িত। শ্রমিকেরা বর্তমানে যে টাকা পান, তা দিয়ে সংসার চালানো দায়। এ কারণেই সব সেক্টরে মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে পাটকলশ্রমিকেরা থেকে গেছেন অবহেলিত।

আন্দোলন ছাড়া দাবি আদায়ের কোনো পথ খোলা নেই বলে মনে করছেন শ্রমিকনেতারা। কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা গেলেই সরকার ব্যাপারটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

৪ এপ্রিল দ্বিতীয় দফা আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে খুলনায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় শ্রমিকেরা খুলনা নগরের দৌলতপুরের নতুন রাস্তার মোড়ে থাকা পুলিশ বক্স ভাঙচুর করেন। শ্রমিকদের হামলায় আহত হন চার পুলিশ সদস্য।

শ্রমিকদের আবারও আন্দোলনের ঘোষণাকে স্বাভাবিকভাবেই দেখছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেএমপি কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) সরদার রকিবুল ইসলাম বলেন, পাটকলশ্রমিকেরা সারা দেশেই আন্দোলন করবেন। তাঁদের আন্দোলনের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকেরা বিবেচনা করবেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের জানমাল হেফাজত করার জন্য সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।