নাটোরে বোন বানিয়ে শিশু অপহরণ

উদ্ধারের পর মা-ছেলের আনন্দাশ্রু।  প্রথম আলো
উদ্ধারের পর মা-ছেলের আনন্দাশ্রু। প্রথম আলো

নাটোরের এক গৃহবধূর সঙ্গে মুঠোফোনে ধর্মের বোন পাতিয়ে বাড়িতে বেড়াতে এসে ওই নারীর শিশুসন্তানকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে একটি অপহরণকারী চক্র। চার দিন পর গত বৃহস্পতিবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে গাইবান্ধা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। এ সময় আটক করা হয় তিন অপহরণকারীকে। নাটোর জেলার পুলিশ সুপার বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রায় চার মাস আগে এক তরুণ নিজেকে ‘সোহাগ’ বলে পরিচয় দিয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আগ্রাণ গ্রামের সেকেন্দার আলীর স্ত্রী সাহিদা বেগমের সঙ্গে মুঠোফোনে ধর্মের ভাই-বোন সম্পর্ক স্থাপন করেন। সোহাগের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কড্ডার মোড় এলাকায়। ৫ এপ্রিল রাতে ওই সোহাগ দুই বন্ধুকে নিয়ে সাহিদার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। দুদিন সেখানে থাকার পর ৭ এপ্রিল সকালে সাহিদার ছেলে বাবু আহম্মেদকে (৮) নিয়ে ওই তরুণেরা বেড়াতে বের হন। বিকেল গড়িয়ে গেলেও ছেলেকে নিয়ে তাঁরা বাড়িতে ফিরে না এলে খোঁজাখুঁজি করতে গিয়ে দেখা যায়, ওই তরুণেরা সাহিদার স্বামীর মুঠোফোন নিয়ে গেছেন। এর কিছু পরই কথিত সোহাগ ওই মুঠোফোন থেকে সাহিদাকে ফোন করে জানান, তাঁরা বাবুকে অপহরণ করেছেন। শিশুটিকে মুক্তি দিতে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন অপহরণকারীরা। টাকা না পেলে শিশুটিকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেন তাঁরা। বিষয়টি বড়াইগ্রাম থানাকে জানানো হলে পুলিশ অপহরণকারীর মুঠোফোনে আড়ি পাতে। তাঁদের কথামতো বিকাশে ছয় হাজার টাকাও পাঠানো হয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে বিকাশের টাকা তোলার সময় পুলিশ নার্গিস আক্তার নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যে পুলিশ জয়পুরহাট ও গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর এলাকার দুর্গম চরাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা ইশান আহম্মেদ সোহাগকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপহৃত বাবুকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় অপর অপহরণকারী শাহজাহানের খালা নুরজাহানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তিনি অপহৃত শিশুটিকে খাবার সরবরাহ করে আসছিলেন।

পুলিশ সুপার আরও জানান, অপহরণকারী চক্রটির আরও কিছু সদস্য এখনো পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অপহরণকারীদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা কিছু কিছু করে পরিশোধের কৌশল অবলম্বন করে অপহৃত শিশুটিকে অক্ষত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। তা না হলে শিশুটিকে বাঁচানো যেত না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলন চলাকালে (রাত সাড়ে ১০টা) অপহৃত বাবুকে তাঁর মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়। চার দিন পর মা-বাবা ও সন্তানের দেখা হওয়ায় এক আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শিশুটির মা সাহিদা বেগম বলেন, ‘মুঠোফোনে অপরিচিত লোককে বিশ্বাস করে আমি ভয়ানক ভুল করেছি। আমার মতো আর কেউ যেন এ ভুল না করে।’

সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের সমন্বয়কারী বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুণ অর রশিদ বলেন, উদ্ধার অভিযানে নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, জয়পুরহাট ও গাইবান্ধা জেলার পুলিশ আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন।