আর কারও অবস্থা যেন নুসরাতের মতো না হয়

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। আর যেন কারও অবস্থা নুসরাতের মতো না হয়।

গণভবন থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত মানববন্ধনের অংশ হিসেবে আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই দাবিতে মানববন্ধন করেছেন।

মানববন্ধনে নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবি তুলে বক্তারা বলেন, এই নির্মম ঘটনায় যারা জড়িত তাঁদের অবশ্যই ফাঁসি দিতে হবে। এই ঘটনার বিচার যাতে দ্রুত সময়ে হয় সে জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। নুসরাতের হত্যাকাণ্ড যেভাবে হয়েছে আর কোন নুসরাতকে যেন এভাবে নির্মম ভাবে মরতে না হয়। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন হবে ও এতে যারা জড়িত থাকবে তাদের তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচার দিতে হবে। তা না হলে এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে থাকবে। যে পুলিশ নুসরাতের মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে তাকেও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।

মানববন্ধনে অংশ নেয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, ফেনী সমিতি, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরাম।

আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবি তুলে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন করছেন। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নুসরাত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবি তুলে বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন করছেন। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে রাজধানীর আসাদগেট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত মানবন্ধন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলে। মানববন্ধনে নাগরিক প্রতিনিধিরা নুসরাত হত্যায় জড়িতদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের বিচার, নারী, শিশু ধর্ষণ, রাষ্ট্রের ক্ষমতাহীন উদাসীনতা, নীতি–নৈতিকতা অবক্ষয়ের প্রতিবাদে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

‘গণভবন থেকে বঙ্গভবন’ শীর্ষক এই মানববন্ধনে সামাজিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবী, মানবাধিকার, সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেয়। সাধারণ পথচারীদের অনেকেও এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

আসাদগেটে মানববন্ধনের অংশ নিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম বলেন, নারী নির্যাতন, ধর্ষণের মতো ঘটনা এতটাই নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে, এখন এগুলো সবার গা–সওয়া হয়ে গেছে। তনু হত্যার পরেও বাংলাদেশ জেগেছিল, তাও সে ঘটনায় বিচার হয়নি। এই অপরাধীদের খুঁটির জোর কোথায়? কোথায় তাদের ক্ষমতার উৎস?

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজধানীর গণভবন থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। বঙ্গভবন এলাকা, ঢাকা, ১৩ এপ্রিল। ছবি: দীপু মালাকার
ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজধানীর গণভবন থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। বঙ্গভবন এলাকা, ঢাকা, ১৩ এপ্রিল। ছবি: দীপু মালাকার

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ সরকার বলেন, ছয় সন্তানের জননী থেকে শিশু কেউ ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। বেশির ভাগ ঘটনায় তদন্ত কমিটির নামে বিষয়টিকে হালকা করে ফেলা হয়। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির বলেন, নারী–পুরুষ সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হবে না।

আগামী ২০ থেকে ২৭ এপ্রিল সারা দেশে নারী নির্যাতনবিরোধী সপ্তাহগ পালন করার ঘোষণা দেন সিপিবির ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল হক।

গত ৬ এপ্রিল নুসরাত পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তাঁর গায়ে আগুন দেন। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ওই দিন রাতে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।

এর আগে গত ২৭ মার্চ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। গত রোববার নুসরাত চিকিৎসকদের কাছে দেওয়া শেষ জবানবন্দিতে বলেছিলেন, নেকাব, বোরকা ও হাতমোজা পরা চারজন তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। ওই চারজনের একজনের নাম শম্পা।