বর্ষবরণের উৎসবে মেতেছে দেশ

এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’। ছবি: আবদুস সালাম
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’। ছবি: আবদুস সালাম

স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪২৬। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার উৎসবে মেতেছে পুরো দেশ। দেশজুড়ে বইছে আনন্দের বন্যা।

ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজন। ছবি: আবদুস সালাম
ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজন। ছবি: আবদুস সালাম

বরাবরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছে ছায়ানট। রোববার ভোর সোয়া ছয়টার দিকে রমনার বটমূলে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়।

ছায়ানটের আয়োজনে অংশ নেন নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ। ছবি: আবদুস সালাম
ছায়ানটের আয়োজনে অংশ নেন নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ। ছবি: আবদুস সালাম

ছায়ানটের আয়োজনে শামিল হতে ভোরেই রমনার বটমূলে নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষের সমাগম ঘটে। তাদের পরনে ছিল রঙিন পোশাক। চোখে-মুখে আনন্দ-উচ্ছ্বাস।

শোভাযাত্রায় বাঘ ও বকের অনুষঙ্গ। ছবি: আবদুস সালাম
শোভাযাত্রায় বাঘ ও বকের অনুষঙ্গ। ছবি: আবদুস সালাম

ছায়ানটের এই আয়োজনে নতুন বছরের প্রথম প্রভাতে রমনা উদ্যান স্পন্দিত হয়ে ওঠে। ছায়ানটের বর্ষবরণের এবারের প্রতিপাদ্য ‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’।

সবার মাঝে উৎসবের আমেজ। ছবি: আবদুস সালাম
সবার মাঝে উৎসবের আমেজ। ছবি: আবদুস সালাম

কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত হয় ছায়ানটের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। তল্লাশির পর সবাইকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। পুরো আয়োজনজুড়ে মোহিত হয়ে থাকেন আগত দর্শক–শ্রোতা।

চলছে সেলফি তোলা। ছবি: আবদুস সালাম
চলছে সেলফি তোলা। ছবি: আবদুস সালাম

সকাল সাড়ে নয়টার আগেই বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঐতিহ্য অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। অংশ নেন প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ।

‘এ বৃহৎ লজ্জারাশি চরণ-আঘাতে/চূর্ণ করি দূর করো। মঙ্গলপ্রভাতে/মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে/উদার আলোক-মাঝে উন্মুক্ত বাতাসে’-নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থের ৪৮ নম্বর কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবে সব বাধা পেরিয়ে অনুপ্রেরণা খুঁজেছিলেন। আর রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণায় সময়কে ধারণ করে প্রেরণার সন্ধান করা হয়েছে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায়। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’।

শিশুর গালে বৈশাখের রং। ছবি: আবদুস সালাম
শিশুর গালে বৈশাখের রং। ছবি: আবদুস সালাম

আজকের শোভাযাত্রায় ছিল মূল আটটি শিল্পকাঠামো। সবই চেনাজানা। বাঘের মুখ থেকে কাঁটা তোলার চিরায়ত গল্পটি উপস্থাপিত হয়েছে বাঘ ও বকের অনুষঙ্গে। মঙ্গলের বার্তা প্যাঁচা। সমৃদ্ধির কথা বলেছে ছাগল আর সিংহের সমন্বয়ের বিশেষ মোটিফ। লোকজ ঐতিহ্যের চিত্র মেলে ধরেছে গাজির পটের গাছ। এ ছাড়া অনুষঙ্গের মধ্যে ছিল দুই মাথা ঘোড়া, দুই পাখি, কাঠঠোকরা। ছিল পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় সওয়ার মানুষ।

নববর্ষের অনুষ্ঠানে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছবি: আবদুস সালাম
নববর্ষের অনুষ্ঠানে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ছবি: আবদুস সালাম

চারুকলা থেকে বের হয়ে শাহবাগ মোড় হয়ে শিশুপার্কের সামনে দিয়ে ঘুরে আবার টিএসসি হয়ে পুনরায় শাহবাগে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা শোভাযাত্রা।

চারুকলা থেকে এই শোভাযাত্রার প্রচলন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামকরণ হয়। ২০১৬ সালে আয়োজনটি ইউনেসকোর অপরিমেয় বিশ্ব সংস্কৃতি হিসেবে স্বীকৃতি পায়।